কৃষি অধিদফতরের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, বিভাগের ছয় জেলায় এ বছর ৩৬ হাজার ৯১১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে জমি থেকে যে তরমুজ পাওয়া গেছে, সেই আলোকে প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ৪৮ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে পটুয়াখালী ও ভোলা জেলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজ আবাদ হয়েছে। পটুয়াখালী জেলায় ২১ হাজার ৬৮২ হেক্টর এবং ভোলায় ১০ হাজার ৪৯১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। সম্মিলিতভাবে বিভাগের ছয় জেলায় এ বছর ১৪ লাখ দুই হাজার ৬০৮ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেলার বাজারগুলোতে বর্তমানে ১৫-২০ কেজি ওজনের তরমুজ অপেক্ষাকৃত কম দেখা গেলেও আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই সাইজের তরমুজ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। এই সাইজের তরমুজগুলোর দাম বেশি তাই বেশি লাভের আশা করছেন তারা।
ভোলার কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় বলছে, তরমুজ চাষাবাদ ও বিপননের সঙ্গে যুক্ত ভোলার দুই লাখ মানুষ এ বছর আর্থিকভাবে লাভবান হবে। আগে এসব মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় পরিবহন সংকটের কারণে ব্যাপক লোকসানের মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু এ বছর তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, ‘এ বছর হেক্টর প্রতি কৃষকের তরমুজ উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। সেখানে তারা হেক্টর প্রতি চার লাখ টাকার ওপরে আয় করেছে। কিন্তু প্রতি বছর যাতায়াত খরচ বাড়ায় লাভের বড় একটা অংশ ওই খাতে ব্যয় হয় কৃষকদের। তারপরও কৃষকরা লাভ করবেন বলে আশা করি।’
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র থেকে জানা গেছে, এ জেলায় ২১ হাজার ৬৮২ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। ফলিত তরমুজ প্রথম দফায় কৃষকরা ইতোমধ্যে কেটেছে। এতেই কৃষকরা সব খরচ পুষিয়ে নিয়েছে। এপ্রিল ও মে মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা তরমুজ কাটা হলে কৃষকরা তিনগুণ লাভ করতে পারবে।
সরেজমিনে বরিশালের তরমুজের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, জেলা শহরের পোর্ট রোডের ইলিশের আড়ত দখল করেছে তরমুজ। প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ট্রলারে বিভিন্ন স্থান থেকে এ আড়তে তরমুজ আসছে। এই আড়ত থেকে তরমুজ যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। আড়তদাররা জানান, প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫টি ট্রাকে তরমুজ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর পোর্ট রোড এবং খালজুরে থাকে তরমুজের ট্রাক ও ট্রলার। এখানে কৃষকরা তরমুজ এনে তা আড়তে বিক্রি করছেন। তরমুজ বিক্রি করতে আসা কৃষদের মুখে হাসি। আরও দুইবার তরমুজ উত্তোলন করতে পারবে কৃষকরা। ওই দুইবারে যা উত্তোলন করা হবে, তার সবটাই লাভ থাকবে বলে জানান কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক সাহিনুর আজম খান বলেন, ‘দোআঁশ ও বেলে মাটি তরমুজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বানিজ্যিকভাবে আরও বেশি তরমুজ চাষাবাদ করা হলে, এ অঞ্চলে দেশের সর্ববৃহৎ তরমুজের বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’