ভোটার তালিকা হালনাগাদই কপাল পুড়লো ৬৫ বছরের বৃদ্ধা বিধবা শানু বেগমের। জীবিত থাকলেও হালনাগাদে দুই বছর পূর্বে মৃত দেখানোর কারণে বন্ধ হয়ে গেছে সরকার থেকে প্রাপ্ত বিধবা ভাতা। শুধু বিধবা ভাতা নয়, সরকারের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এ বৃদ্ধা। ভোটার তালিকায় নিজেকে জীবিত দেখাতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘোরাঘুরি করেও কোন লাভ হয়নি।
শানু বেগম বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের মৃত মন্নান ফরাজির স্ত্রী। সে চার সন্তানের জননী। ২২ বছর পূর্বে তার স্বামী মারা যান। গত এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে তার ভাতা। ২০১৯ সালের পূর্বেই শানু মারা যান বলে ভোটার তালিকার হালনাগাদে উল্লেখ থাকায় এ বিপদে পড়েছেন তিনি।
২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহকারী মুলাদীর চর-কমিশনার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিজাম উদ্দীন শানু বেগমকে মৃত উল্লেখ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শানু বেগম বলেন, বিধবা ভাতার টাকায় আমার সংসার চলে না। তবে আমার অসুখে ওই টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংকটে কাজে লাগে। এজন্য ভাতাটা আমার উপকারে আসে। হঠাৎ করে টাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছি। জীবিত থাকতে আমাকে কীভাবে মৃত দেখালো- প্রশ্ন করেন বৃদ্ধা। তিনি তার সমস্যার দ্রুত সমাধানের দাবি জানান। এজন্য ছেলেদের নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দফতরে ধর্না দিলেও সমাধান মিলছে না।
এ ব্যাপারে কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মন্টু বিশ্বাস বলেন, শানু বেগমের এ সমস্যার সমাধান একমাত্র উপজেলা নির্বাচন অফিস ছাড়া সম্ভব নয়। এজন্য তাকে সেভাবে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আমিও তার এ সমস্যার সমাধানে চেষ্টা করবো।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শওকত আলী বলেন, ২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদে শানু বেগমকে মৃত বলে উল্লেখ করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ওই বৃদ্ধাকে লিখিতভাবে আবেদন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আবেদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ভোটার তালিকা পরিবর্তন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নুরুল আলম জানান, ভুক্তভোগী ওই বৃদ্ধা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন করলে সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শানু বেগম যাতে দ্রুত বিধবা ভাতা পান তার ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
বরিশাল জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা অভিযুক্ত তথ্য সংগ্রহকারীর বিচার দাবি করেন। একইসঙ্গে দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করে শানু বেগমের বিধবা ভাতা চালুর দাবি জানান।
অভিযুক্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহকারী মুলাদীর চর-কমিশনার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিজাম উদ্দীন দাবি করেন, হালনাগাদ কার্যক্রমের আগেই শানু বেগমকে ভোটার তালিকায় মৃত দেখানো হয়। হালনাগাদের সময় সেটাই উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে আমার কোন দোষ দেখছি না।