ভিক্ষার গোশত বিক্রির টাকা দিয়েও ভাতা পাননি তাহমিনা!

বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের কাঠেরচর গ্রামের বিধবা ভিক্ষুক তাহমিনা বেগমকে (৬৫) বিধবা ভাতা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ঘুষ বাবদ দুই হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ভিক্ষা করে পাওয়া গোশত বিক্রি করে বৃদ্ধ তাহমিনা জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতা আব্দুর রব খানকে ওই টাকা দেন বলে জানা গেছে।

তাহমিনা ওই গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নান হাওলাদারের স্ত্রী। অভিযুক্ত আব্দুর রব একই গ্রামের মৃত খাদেম খানের ছেলে এবং কাজিরচর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড জাতীয় পার্টির সভাপতি।

জানা যায়, প্রায় তিন বছর আগে তাহমিনার স্বামী মারা যান। দাম্পত্য জীবনে তাদের কোনও সন্তান নেই। সহায় সম্বল বলতে একটি ছাপরা ঘর। কোনও স্বজন না থাকায় নিরুপায় হয়ে ভিক্ষা করে জীবন নির্বাহ করেন তাহমিনা।

তাহমিনা বলেন, বিধবা ভাতা পেতে বিভিন্ন ব্যক্তির পেছনে ঘুরেও কোনও কাজ হয়নি। এক বছর আগে ভাতা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে আব্দুর রব তিন হাজার টাকা চান। গত ঈদ-উল আজহার দিন বিভিন্ন বাড়ি থেকে পাওয়া চার কেজি গরুর গোশত বিক্রি করে আব্দুর রবকে দুই হাজার টাকা দেই। তবে এখন পর্যন্ত ভাতার কোনও কার্ড পাইনি।

তিনি আরও বলেন, ১০ মাস আগে গোশত বিক্রির টাকা দেওয়া হলেও রব খান বিধবা ভাতা দেয়নি। টাকা ফেরত চাইলে গালিগালাজ করেন। পরে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে বিচার দিয়েছি।

কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মন্টু বিশ্বাস বলেন, তাহমিনা আমাকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। তাকে বিধবা ভাতায় তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব তাকে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

আব্দুর রবকে প্রতারক উল্লেখ করে চেয়ারম্যান আরও বলেন, টাকা দেওয়ার কারণে এবং ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

চেয়ারম্যানের দাবি, ভাতা তালিকাভুক্তির আগে মাইকিং করাসহ মেম্বারদের মাধ্যমে গ্রামবাসীকে অবহিত করা হয়। কিন্তু এরপরও তারা প্রতারকের কাছে যান। পরে ভাতা তো পানই না, উপরন্তু নিজের টাকাও খোয়া যায়।

মুলাদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভ্রা দাস বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জা ও দুঃখজনক। টাকা নেওয়ার প্রমাণ পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি তাহমিনাকে বিধবা ভাতায় তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আব্দুর রব খানের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও কথা বলা সম্ভব হয়িনি।