উপকূলে জোয়ারের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এতে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে উপকূলের মানুষ। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় পটুয়াখালীতে ৩৯১টি সাইক্লোন শেল্টারসহ ৮০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে উপকূলবাসীকে সরিয়ে নিতে কাজ করছে ৯৩টি মেডিক্যাল টিম, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভলান্টিয়ার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ মোট ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবী।
জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম জানান, পটুয়াখালী সদরে ১৯, দুমকী ৪৩, মির্জাগঞ্জে ২৭, বাউফলে ১৩৫, দশমিনায় ৫৭, গলাচিপায় ১০৭, কলাপাড়ায় ১৬০ এবং রাঙ্গাবালীতে ৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেডিক্যাল টিম গঠন করার জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখার জন্য রেড ক্রিসেন্টসহ উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলার কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ থাকলে তা দ্রুত মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া জনসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা জোরালো করার ঘোষণা দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দাদের ঘরবাড়ির নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত।
এদিকে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হালিম সাহেলী জানান, কলাপাড়া উপজেলায় ৫২০ কিলোমিটারসহ জেলায় মোট বেড়িবাঁধ রয়েছে ১ হাজার ৩৪১কিলোমিটার। যারমধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৬ কিলোমিটার। এছাড়া সম্ভাব্য ঝুঁকিতে আছে ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ যেগুলোর সংস্কারকাজ চলমান। এরমধ্যে শুধু কলাপাড়া উপজেলাতেই আছে ৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। বাকি ২৪ কিলোমিটার পটুয়াখালী সদর উপজেলায়। তিনি আরও জানান, পটুয়াখালীর পায়রা নদীর বিপদসীমার স্তর হলো ২ দশমিক ৮১ সেন্টিমিটার। কিন্তু রবিবার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত পায়রা নদীর জোয়ারের উচ্চতা ছিল ২ দশমিক শূন্য ৮ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে আজ মঙ্গলবার স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ জোয়ারে ভেঙে গেলে তাৎক্ষণিক সেগুলো সংস্কারের জন্য স্থানীয় সার্ভেয়ার, ভলান্টিয়ারসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । পর্যাপ্ত পরিমাণে জিওব্যাগ বালুর বস্তাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত পটুয়াখালীতে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০%। তাপমাত্রা ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এছাড়া বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার।
জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ জাহাংগীর আলম শিপন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পটুয়াখালীতে মোট ৯৩টি মেডিক্যাল টিম গঠন করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় প্রয়োজনীয় খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ অন্যান্য ওষুধ সামগ্রী মজুত রাখা আছে। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ে কেউ আহত হলে তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন উপজেলাসহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী নৌবন্দর কর্মকর্তা মহিউদ্দিন খান জানান, জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে ৬৫ ফুটের নিচে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে ঢাকাগামী দোতলা লঞ্চ ছেড়ে যাবে সেক্ষেত্রে পরবর্তী নির্দেশনা এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রণজিৎ কুমার সরকার জানান, ঘূর্ণিঝড় ক্ষয়ক্ষতি থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক সাহায্য সহযোগিতা করার লক্ষ্যে নগদ ২ কোটি ৩০লাখ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।