চিরকুট লিখে কিশোরীর আত্মহত্যা, বাড়িওয়ালার ছেলে আটক

‘মা আমার নামে তারা যে বদনাম উঠিয়েছে তাতে আমি এ পৃথিবীতে থাকতে পারছি না। আমি একটা খারাপ মেয়ে, আমি নাকি খুব খারাপ। আমাকে কেউ বিশ্বাস করে না। কেউ না তুমি ছাড়া।’ এভাবেই মিথ্যা অপবাদে হয়রানি ও কষ্টের কথাগুলো লিখে বরগুনায় আত্মহত্যা করেছে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। এদিকে কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় বাড়ির মালিকের ছেলে জামাল হোসেনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয়রা।

সোমবার (৫ জুলাই) বরগুনা পৌর শহরের খামারবাড়ি এলাকার এক বাড়ির বাথরুম থেকে ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই কিশোরী স্থানীয় এক স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল। 

স্থানীয়রা জানান, ওই কিশোরী পরিবারের সঙ্গে পৌর শহরের খামারবাড়ি এলাকায় থাকতো। ভাড়া বাসায় ওঠার পর বাড়ির মালিকের ছেলে জামাল হোসেন স্ত্রী-সন্তান থাকার পরেও কিশোরীকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতো। অভিযোগ রয়েছে, ওই কিশোরী বাথরুমে গেলে জামাল উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা এবং অশ্লীল ইঙ্গিত করতো। 

বিষয়টি কিশোরী তার মাকে এবং জামালের স্ত্রীকে জানায়। এলাকার অনেকেই বিষয়টি জেনে যায়। এরপর জামাল ক্ষিপ্ত হয়ে ওই স্কুলছাত্রীকে নিয়ে কুৎসা রটাতে থাকে এবং রাস্তায় পেলে তারকে অশ্লীল মন্তব্য ও ইঙ্গিত করে হেনস্তা করতো বলে অভিযোগ রয়েছে। 

স্থানীয়রা বলছেন, উত্ত্যক্ত ও অপমান সইতে না পেরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ওই স্কুলছাত্রী। মারা যাওয়ার আগে লিখে যাওয়া চিরকুটেও অপবাদ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছে কিশোরী।

কিশোরীর মা বলেন, জামালের উত্ত্যক্ত ও অপবাদ সহ্য করতে না পেরেই আমার মেয়েটা আত্মহত্যা করেছে। আমার মেয়ের কথা কেউ বিশ্বাস করতে চায়নি। এখন আমার মেয়েতো চলে গেলো, এখন সবাই বিশ্বাস করবে। উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করলে আমার মেয়েকে শারীরিকভাবেও জামাল লাঞ্ছিত করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমার মেয়ে ও জামালকে জড়িয়ে প্রতিবেশীরা অনৈতিক সম্পর্কের কথা বলছিল। আমি রবিবার রাতে বাসার মালিক আবুল বাশারকে মোবাইলফোনে তার ছেলের এই বিষয়গুলো জানাই। পরে আবুল বাশার গ্রামের বাড়ি থেকে এসে জামালকে শাসন করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু তার আগেই আমার মেয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলো।  

এ বিষয়ে জানতে জামালের বাবা আবুল বাশারের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বরগুনা সদর সার্কেল) মেহেদী হাসান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আমরা একটি সুইসাইড নোট পেয়েছি। এ বিষয়ে সদর থানায় অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় কিশোরীকে উত্ত্যক্তের অভিযোগে স্থানীয়রা জামাল নামের একজনকে অভিযুক্ত করলে তাকে পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।