কুয়াকাটা সৈকতে আরেকটি মৃত ডলফিন

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আবারও ৭ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। শনিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে সৈকতের  ব্লক পয়েন্ট সংলগ্ন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এক সদস্যের চোখে পড়ে ডলফিনটি।

স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব হোসেন বলেন, জোয়ারের সঙ্গে ডলফিনটি সৈকতের তীরে ভেসে আসলে তাৎক্ষণিক বিষয়টি কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটি ও সৈকত রক্ষায় কাজ করা ইকোফিশ-২ প্রকল্পের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়। পরে ডলফিনটি মাটিচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তারা।

স্থানীয় জেলে আশরাফ আলী জানান, ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে একই প্রজাতির তিনটি মৃত ডলফিন কুয়াকাটা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ভেসে এসেছে। এর মধ্যে আজকে যে ডলফিনটি আসছে সেটার গায়ে জাল পেঁচানো ছিল। এর আগের ডলফিনগুলোর শরীরেও আঘাতের চিহ্ন ছিল।

কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটির সদস্য কেএম বাচ্চু জানান, সৈকতে জোয়ারের সঙ্গে শ‌নিবার দুপু‌রের দি‌কে ডল‌ফিন‌টি ভে‌সে আ‌সে। শুক্রবার সকা‌ল ও বি‌কালের দি‌কে দু‌ইটি ডলফিন এবং সমুদ্রে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কাঁকড়া ভেসে এসেছে। কুয়াকাটা সৈকতে এর আগে গত ৭ আগস্ট একটি গঙ্গা নদীর ডলফিন এবং তার একদিন পরে ৯ আগস্ট দুইটি ডলফিন কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে এসেছিল।

ডলফিন রক্ষা কমিটির টিম লিডার রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, ডলফিন গভীর সমুদ্রে থাকে। তাই দিঘা বা তার আশেপাশের সমুদ্রের কিনারায় ডলফিন দেখতে পাওয়া বিরল ঘটনা। অথচ কুয়াকাটা সমুদ্র‌ সৈকত এলাকায় গত কয়েক মাসে একাধিক ডলফিনের দেখা মিলেছে। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার দু‌ইটি মৃত ডলফিন ভে‌সে আ‌সে। পর পর কয়েকটি মৃত ডলফিন উদ্ধারের ঘটনায় চিন্তিত সমুদ্রবিজ্ঞানীরা।

তিনি আরও জানান, জোয়ারের সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে প্রায়ই মৃত ডলফিন ভেসে আসে। এদের মুখে রক্ত দেখা যায়। আঘাতের চিহ্নও পাওয়া যায়। তবে সমুদ্রে যেসব জেলে মাছ শিকারে যান তাদের ট্রেনিং দিলে ডলফিনের মৃত্যু কমে আসতে পারে।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী কামাল হাসান রনি বলেন, এভাবে সমুদ্রে ডলফিন মারা যাওয়ার তাদের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে মৎস্য বিভাগকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। একই সঙ্গে জেলেদের সচেতন করতে তাদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। কারণ সামুদ্রিক এ বন্ধু প্রাণীগুলো মারা পড়লে সমুদ্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ডলফিনগুলোর মৃত্যুর কারণ ঠিক বলা যাচ্ছে না। এ ধরনের ডলফিন মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে। তাই বেশিরভাগ সময় জেলেদের মাছ ধরার জালে আটকে পড়ে মারা যায়। আবার বয়সের কারণেও অনেক সময় মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর জোয়ারের পানিতে তীরে চলে আসে। ডলফিন দুটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং কাঁকড়াটির মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হবে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, ডলফিনের মৃতদেহ ভেসে আসার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৎস্য বিভাগ ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকদের জানানো হয়েছে। কেন মৃত্যু হয়েছে বিষয়টা তারা দেখবেন।