হতদরিদ্রদের নামে আয়কর পরিশোধ না করায় জরিমানার নোটিশ

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দুটি গ্রামের চারটি হতদরিদ্র পরিবারের নারী সদস্যদের নামে আয়কর পরিশোধ না করায় নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বরিশাল উপ-কর কমিশনার কার্যালয়ের (বৈতনিক) শাখা থেকে উপ-কর কমিশনার স্বাক্ষরিত নোটিশগুলোতে আয়কর পরিশোধ না করার জন্য কেন জরিমানা করা হবে না তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

নোটিশ প্রাপ্তদের তিনবেলা খাবার জোটাতে কষ্ট হয়। সেখানে কীভাবে তাদের নামে আয়করের নোটিশ এলো এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা। এ থেকে পরিত্রান পেতে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ছুটাছুটি করছেন ওই চার পরিবারের সদস্যরা।

জানা গেছে, নোটিশপ্রাপ্ত উপজেলার টেম্পোচালক ফারুক হোসেনের স্ত্রী সেলিনা বেগমকে ৭ সেপ্টেম্বর, মাহিলাড়া ইউনিয়নের শরিফাবাদ গ্রামের ভ্যানচালক কবির ইসলাম বেপারীর স্ত্রী কল্পনা বেগম এবং দিনমজুর মহসিন বেপারীর স্ত্রী সুবর্ণা মোহসিনকে ১২ সেপ্টেম্বর এবং বিল্বগ্রাম এলাকার দিনমজুর চাঁনমিয়া সরদারের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়।

সুবর্ণা জানান, তার স্বামী একজন দিনমজুর। তাদের পরিবারে দুটি প্রতিবন্ধী সন্তান রয়েছে। শুধু বসতভিটে ছাড়া তাদের আর কোনও সম্পত্তি নেই। কল্পনা বেগম জানান, তার স্বামী একজন ভ্যানচালক। এমন কোনও সম্পদ তাদের নেই যে তার নামে আয়কর পরিশোধের জন্য সরকারি চিঠি আসবে। একই কথা জানিয়েছেন, বিল্বগ্রাম এলাকার দিনমজুর চাঁনমিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। 

গৃহিণী সেলিনা বেগম জানান, তার স্বামী একজন টেম্পো চালক। অথচ তার নামে আয়কর পরিশোধের জন্য নোটিশ করা হয়েছে। এমনকি তিনি (সেলিনা) আয়কর পরিশোধ না করায় তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে নোটিশে উল্লেখ রয়েছে।

এ ব্যাপারে মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, তার ইউনিয়নের আয়কর পরিশোধের জন্য নোটিশপ্রাপ্ত চার জন গৃহিণী হতদরিদ্র। যার মধ্যে সুবর্ণা মোহসিন এবং সেলিনা বেগমের স্বামীর নামে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির রেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও অপর দুজন গৃহিণীর স্বামী দিনমজুর। তাদেরও সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা নিয়ে চলতে হয়। হতদরিদ্র পরিবার চারটিকে আয়করের আওতামুক্ত করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, আয়কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিবার চারটিকে আয়কর মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বরিশাল কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার সদর দফতর (প্রশাসন) আবুল কালাম আজাদ জানান, যদি কেউ জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ব্যবহার করে ই-টিআইএন গ্রহণ করেন নিয়ম অনুযায়ী তাকে আয়করের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এ ক্ষেত্রে ওই চার জনের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কেউ হয়তো আয়করের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে। ফলে তাদের কর রিটার্ন দাখিলের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আর নির্দিষ্ট সময়ে রিটার্ন দাখিল না করলে ন্যূনতম জরিমানা পাঁচ হাজার টাকা।

তিনি আরও জানান, ওই চার জন কিংবা চার জনের মধ্যে কেউ একজন অফিসে কাগজপত্র নিয়ে আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, গৃহিনী কল্পনা, সেলিনা বেগম ও সুবর্না মোহসিন একই পরিবারের আপন তিন ভাইয়ের স্ত্রী। নোটিশে তাদের গ্রাম মাহিলাড়া উল্লেখ করা হলেও তারা তিন জনই শরিফাবাদ গ্রামের বাসিন্দা। এর মধ্যে কল্পনা বেগম ও সুবর্ণার নামে গত ২৮ জুলাই, সেলিনা বেগমের নামে ২২ আগস্ট এবং মনোয়ারা বেগমের নামে ২৪ আগস্ট নোটিশগুলো ইস্যু করা হয়।