আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। নিরাপদ প্রজননের স্বার্থে এ সময়ের মধ্যে ইলিশ ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময়, সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ এক বছর সশ্রম সাজা ও দুই হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। তবে মৌসুমি জেলেরা আইন ভেঙেই মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসব জেলেদের দেওযা তথ্যমতে, নিষিদ্ধ সময়ে নিরাপদে মাছ ধরা নিশ্চিতে তারা সোর্স ব্যবহার করেন। প্রশাসনের অভিযানের আগেই জেলেদের কাছে সোর্স তথ্য পাঠিয়ে দেয়। বিনিময়ে টাটকা ইলিশ চলে যায় সোর্সের দেওয়া বিভিন্ন ঠিকানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জেলে বলেন, ‘সারা বছর অন্য কাজ করি। তবে মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে নদীতে বড় আকারের বেশি মাছ ধরা পড়ে। তাই এ সময়টাতে মাছ ধরার কাজ করি। তবে প্রশাসনের হাত থেকে বাঁচতে সোর্স ম্যানেজ করে চলি। প্রশাসন কখন অভিযানে নামবে সোর্সদের কাছ থেকে তা মোবাইলফোনে জেনে যাই। বিনিময়ে তাদের দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে যায় ইলিশ।’
স্থানীয় জেলেরা জানান, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে ইলিশ ধরার প্রস্ততি নিচ্ছেন মৌসুমি জেলেরা। পেশাজীবী জেলেরাও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। এই সময় মূলত পেশাজীবী জেলেদের সরঞ্জাম ও মাছ শিকারের কৌশলের সঙ্গে মৌসুমি জেলেদের শ্রম এক হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরার লক্ষ্যে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার শতাধিক মৌসুমি জেলে স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন। এরা নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ইঞ্জিনচালিত দ্রুতগামী নৌকা ও অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করছেন। ইলিশ ধরার সুবিধার্থে নৌকায় ডাবল ইঞ্জিন বসানো হচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের মদতে বিভিন্ন পেশার মানুষ অধিক লাভের আশায় নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর তীরবর্তী নলছিটি উপজেলার সরই, মাটিভাঙ্গা, ষাইটপাকিয়া ফেরিঘাট, সারদল, গৌরিপাশা, অনুরাগ, দপদপিয়া খেয়াঘাট, ঘোপেরহাট, হদুয়া, নলবুনিয়া, নাচনমহল, সদরের পোনাবালিয়া, রাজাপুরের নাপিতের হাট, বড়ইয়া, পালট এলাকায় এক শ্রেণির অসৎ মৎসজীবী ও মৌসুমি মৎস্য শিকারি ইলিশ মাছ ধরার জন্য আগে থেকেই তৎপর হয়ে উঠেছে।
তবে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইয়্যেদা বলেন, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। ইতোমধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মৎস্যজীবী নেতা ও জেলেদেরকে নিয়ে একাধিক সভা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ সময় ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকার জন্য জেলে পাড়াগুলোতে মাইকিং করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিষিদ্ধ সময় কেউ ইলিশ শিকারে নদীতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।