গিনেস বুকে নাম ওঠালেন বরিশালের নিপা

বরিশাল নগরীর গৃহবধূ নুসরাত জাহান নিপা এক মিনিটে এক হাত দিয়ে একাত্তরটি (এক টাকার কয়েন) কয়েন স্তূপ করে টাওয়ার বানিয়ে ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’ গড়েছেন। এক ইতালীয় নাগরিকের ছয় বছর আগের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন তিনি। নতুন বিশ্ব রেকর্ডের স্বীকৃতি হিসেবে মঙ্গলবার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ নিপাকে প্রত্যয়নপত্র পাঠিয়েছে।

নিপা নগরীর দক্ষিণ সাগরদী এলাকার বাসিন্দা ও জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক দেওয়ান আব্দুর রশিদের একমাত্র সন্তান। বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ থেকে রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা নিপা বর্তমানে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করছেন। পাশাপাশি অনলাইন ভলান্টিয়ারের কাজ করেন তিনি। বিয়ের পর তিনি স্বামী কাজী শামসুজ্জামানের সঙ্গে নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় বসবাস করছেন।

নিপা জানান, করোনার শুরুতেই বন্দিজীবনে নতুন কিছু করার চিন্তাভাবনা মাথায় আসে। ইউটিউব-টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন কনটেন্ট দেখে আইডিয়া খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে ইতালির সিলভিও সাবার এক মিনিটে ঊনসত্তরটি কয়েন দিয়ে টাওয়ার বানিয়ে বিশ্ব রেকর্ডটিতে তার চোখ আটকে যায়। তা ছাড়া এ বিষয়টি আয়ত্ত করতে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। অবসর সময়ে বাসায় বসেই প্রশিক্ষণ চালানো সম্ভব হবে। তাই এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন নিপা। এরপর থেকে সময় পেলেই বসে যেতেন কয়েনের টাওয়ার বানানোর অনুশীলনে। এ জন্য এক টাকার একশটি কয়েন ব্যবহার করেন নিপা। এভাবে চলতে থাকে তার অনুশীলন। এতে তাকে উৎসাহ জোগান তার স্বামী। বিষয়টি তার আয়ত্তে আসলে আগের রেকর্ডধারী ব্যক্তির চেয়ে বেশি কয়েন দিয়ে টাওয়ার বানানোর দিকে মনোযোগী হন নিপা। তাতে সাফল্যও আসে। এতে তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।

রেকর্ড গড়ার পর স্বামীর সঙ্গে নিপাগত আগস্ট মাসে ‘মোস্ট কয়েন স্ট্রাকড ইন টু এ টাওয়ার’ ক্যাটাগরিতে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে একটি লিংক পাঠানো হয়। স্বল্প সময়ে এক হাতে ধাতব কয়েন দিয়ে টাওয়ার বানানোর এভিডেন্স এবং অন্যান্য তথ্য ২৪ সেপ্টেম্বর ওই লিংকে আপলোড করেন নিপা।

ভিডিও এভিডেন্সে নিপা এক মিনিটে একহাতে এক টাকা মূল্যমানের একাত্তরটি ধাতব কয়েন দিয়ে টাওয়ার তৈরি করেন। ওই ভিডিও এভিডেন্স যাচাই-বাছাই করে গত ৩০ নভেম্বর গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষ একটি চিঠিতে ‘মোস্ট কয়েন স্ট্রাকড ইন টু এ টাওয়ার’ রেকর্ড গড়ার স্বীকৃতি দেয়। মঙ্গলবার ডাকযোগে বিশ্বরেকর্ডের সার্টিফিকেট হাতে পান নিপা। এতে ভীষণ আনন্দিত নিপা ও তার স্বজনরা।

নিপার স্বামী কাজী শামসুজ্জামান মন্টি বলেন, ‘বিষয়টি এতটা সহজ নয়। তারপরও আমি নিপাকে সাপোর্ট দিই। এতে তার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। কিন্তু এভাবে বিশ্বরেকর্ড গড়বে তা ছিল প্রত্যাশার বাইরে। নিপার বিশ্বরেকর্ডে আমরা সবাই খুবই আনন্দিত।’

জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘বরিশালের মেয়ে নিপার বিশ্ব রেকর্ডে আমরা গর্বিত।’ তাকে উৎসাহিত করতে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।