মামা-ভাগনেকে জেলে পাঠানো সেই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার

পটুয়াখালীতে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে চার জনকে হাজতে পাঠানো মেজবাহ উদ্দিন নামের এক পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিধি বহির্ভূতভাবে পুলিশ লাইন্স থেকে লোকালয়ে বের হওয়ার অপরাধে ওই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বিকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পটুয়াখালী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) আহমাদ মাঈনুল হাসান।

এদিকে, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য স্ত্রী মরিয়ম আক্তার জেরিনকে বাদী বানিয়ে পটুয়াখালী সদর থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা করেন। প্রকৃত ঘটনা যাচাই-বাছাই না করে থানা পুলিশ ওই মামলায় মো. স্মরণ আহমেদ (২২) ও তার ভাই মো. সাব্বির হোসেন (২৪) এবং তাদের মামা গোলাম সরোয়ার, বাড়ির ভাড়াটিয়া মীর নোমানকে (৩৫) গ্রেফতার করে। এ ছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে তুলে নেওয়ার পর মামলার আসামি মীর নোমানকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

রবিবার (১২ জুন) পৌর এলাকার লতিফ স্কুল সড়কে ঘটনাটি ঘটে। পরে সোমবার (১৩ জুন) রাতে পটুয়াখালী প্রেস ক্লাবে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর স্বজনরা। এই নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশ সদস্য মেজবাহ উদ্দিনকে ক্লোজ করা হয়েছে। এ ছাড়াও অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় একটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

আসামি গোলাম সরোয়ারের ছোট বোন আলপনা বেগম দাবি করেন, ‘মামলার আসামি স্মরণ ও সাব্বিরের মা গত ৩০ মে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত ব্যক্তির গোসল এবং দাফনের পরবর্তী কার্যাদি বাসার নিচে পরিত্যক্ত একটি কক্ষে সম্পন্ন হয়। গত ১২ জুন আমার মেজো ভাই গোলাম হায়দার টিটু (পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন মাদকসেবী), পটুয়াখালী পুলিশ লাইন্সে কর্মরত পুলিশ সদস্য মেজবাহ উদ্দিনসহ তাদের অপর সঙ্গীরা একত্রিত হয়ে ওই কক্ষে মাদক সেবনের চেষ্টা করেন। এ সময় স্মরণ ও সাব্বির তাদের বাধা দেন। স্মরণ ও সাব্বিরকে সমর্থন করে বাগবিতণ্ডায় জড়ান ভাড়াটিয়া মীর নোমান। পরে মেজবাহ উদ্দিনের সঙ্গে স্মরণ ও সাব্বিরের হাতাহাতি হয়। কিছুক্ষণ পরে স্থানীয় মসজিদ থেকে আসরের নামাজ আদায় করে বাসায় ফেরেন মামলার চার নম্বর আসামি গোলাম সরোয়ার। তিনি উপস্থিত ঘটনা শুনে ছোট ভাই টিটুকে শাসন করেন এবং বাকিদের গালমন্দ করেন।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘এ সময় পুলিশ সদস্য মেজবাহ ডিবি পুলিশকে জানালে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মীর নোমান, স্মরণ ও তার ভাই সাব্বির হোসেন এবং তাদের বৃদ্ধ মামা গোলাম সরোয়ারকে তুলে নিয়ে মামলা দিয়ে জেলে পাঠান। এ সময় ঘটনাস্থলে থেকে পালিয়ে যায় মাদকসেবী গোলাম হায়দার টিটু, কাউন্সিলর লাবু ও উজ্জল শীল।’

মামলার তিন নম্বর আসামি সাব্বিরের স্ত্রী নুসরাত জাহান দাবি করেন, ‘মামা শ্বশুর গোলাম হায়দার টিটুর নেতৃত্বে পুলিশ সদস্য মেজবাহ উদ্দিনসহ উল্লিখিত ব্যক্তিরা বাসায় মাদকের আসর বসাতো। আমার স্বামী সাব্বির ও দেবর স্মরণ এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানান। এতে পুলিশ সদস্য মেজবাহ সাব্বির ও স্মরণকে মারধর করে। কিন্তু তাদের বড় মামা গোলাম সরোয়ার ঘটনাস্থলে ছিল না। অথচ তাকেও বাসা থেকে তুলে নিয়ে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে পুলিশ।’

পুলিশ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন দাবি করেন, ‘১২ জুন আমি শহরের লতিফ স্কুল রোডে বাসা ভাড়ার জন্য যাই। এ সময় উল্লিখিত ব্যক্তিরা আমার ওপর হামলা করে। আমি প্রাণ বাঁচাতে ডিবি পুলিশকে খবর দেই। বর্তমানে বরিশাল পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। আমি কোনও মাদক সেবনের সঙ্গে যুক্ত নই।’

বিভাগীয় মামলার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক মরিয়ম আক্তার জেরিনকে বিয়ে করার দায়ে আমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা তদন্তাধীন আছে।’

পটুয়াখালী গোয়েন্দা পুলিশের ওসি একে এম আজমল হুদা বলেন, ‘ঘটনার দিন সদর থানা পুলিশকে সহায়তা করেছে ডিবি সদস্যরা।’

সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশ সদস্যের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। নোমানকে থানায় মারধর করা হয়নি। তদন্তে যে দোষী প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমাদ মাঈনুল হাসান বলেন, ‘তদন্তে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। বিধিবহির্ভূতভাবে পুলিশ লাইন্স থেকে লোকালয়ে বের হওয়ার অপরাধে ওই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে ওই চিঠি আমি এখনও দেখিনি। চিঠি দেখে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’