উপহারের ঘরে এসি

পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের বালিপাড়া গ্রামে ইকবাল সেপাই নামে এক ব্যক্তি উপহারের ঘরে এসি লাগিয়েছেন। তিনি সচ্ছল হয়েও উপহারের ঘর পেয়েছেন, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। উপহারের ঘরে এসি লাগিয়ে স্থানীয়দের সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি।

স্থানীয়রা বলছেন, ইকবাল ওই এলাকার বালু ব্যবসায়ী। জাতীয় পার্টি-জেপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ইকবালের বাবা আলমগীর সেপাই ইন্দুরকানী থানা যুবলীগের সদস্য।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইন্দুরকানী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনার প্রথম দিকে উপহারের ঘরের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় ইকবালের। তখন তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।

ওই এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, সচ্ছল হয়েও দলের প্রভাব খাটিয়ে উপহারের ঘর নিয়েছেন ইকবাল। ওই ঘরে এসি লাগিয়েছেন। অথচ এলাকার অনেক দরিদ্র পরিবার ঘর পায়নি।

ইকবাল জানান, তিনি জাতীয় পার্টি-জেপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের বালিপাড়া ইউনিয়ন কমিটির আহ্বায়ক। ২০১৩ সালে উপজেলার চন্ডিপুর কে সি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজমিস্ত্রি বাবার কাজে সহযোগিতা করে যে টাকা পেতেন তা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। এইচএসসিতে ভর্তি হলেও পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। ২০১৭ সালে বিয়ে করেন।

ইকবাল বলেন, বিয়ে যখন করি তখন আমি বেকার। স্ত্রীকে নিয়ে একই এলাকার বাসিন্দা প্রফেসর হারুন অর রশিদের বাসায় ভাড়া থাকতাম। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সেখানে থেকেছি। রাজমিস্ত্রি বাবার সহযোগী হিসেবে কাজ করে যে টাকা পেতাম তা দিয়ে ঘর ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতাম। আমার কোনও জায়গাজমি ছিল না। পরে দাদি লতিমুননেছার তিন শতক জমি বাবা আমাকে দিয়েছেন। ওই জমিতে সরকারি ঘর করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। আমার ঘরটি যেখানে তার আশপাশে কোনও গাছপালা নেই। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের চাল প্রচণ্ড গরম হয়ে যায়। এক বছর বয়সী মেয়েটি গরমে কষ্ট পায়। এ জন্য একটি এসি কিস্তিতে কিনে উপহারের ঘরে লাগিয়েছি।

তিনি বলেন, এক বছর আগে আমি বালুর ব্যবসা শুরু করি। পরে লোন নিয়ে দেড় লাখ টাকায় একটি ড্রেজার মেশিন কিনেছি। ড্রেজার দিয়ে বালু কেটে এলাকায় সরবরাহ করে প্রতিদিন দুই-তিন হাজার টাকা পাই। এখন কিছুটা সচ্ছল হওয়ায় আমার উপহারের ঘর নিয়ে সমালোচনা করছে কেউ কেউ।

ইন্দুরকানী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলে, গৃহহীন হিসেবে বালিপাড়া গ্রামের ইকবাল সেপাইকে উপহারের একটি ঘর দেওয়া হয়েছে। তিনি সেই ঘরে এসি লাগিয়েছেন বলে শুনেছি। আমরা যখন তাকে উপহারের ঘর দিয়েছি, তখন তিনি দিনমজুর ছিলেন। এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।

ইন্দরুকানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুৎফুন্নেছা খানম বলেন, কোনও সচ্ছল ব্যক্তি উপহারের ঘর পাওয়ার কথা নয়। সচ্ছল হয়েও তিনি কীভাবে উপহারের ঘর পেয়েছেন এ বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নেবো।