পায়রা নদীর ওপর লেবুখালী সেতু নির্মাণের পরেই বলা হয়েছিল সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পৌঁছাতে সময় কম লাগবে। তখন বলা হয় মাত্র সাত ঘণ্টায় পৌঁছা যাবে। তবে এবার স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে সময় আরও কমে এসেছে। মাত্র ছয় ঘণ্টায় কুয়াকাটায় পৌঁছানো যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সড়ক পথে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় কক্সবাজার থেকেও দ্রুত পৌঁছা যাবে ১৮ কিলোমিটার বিস্তৃত এ সৈকতে।
কুয়াকাটায় দাঁড়িয়ে একইসঙ্গে দেখা মিলবে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের। লাল কাঁকড়ার সঙ্গে অবিরাম ছোটাছুটি, বালুকা বেলায় প্রিয়জনের সঙ্গে হাঁটাহাঁটি, দিগন্ত জোড়া আকাশ আর সমুদ্রের নীল জলের তরঙ্গায়িত ঢেউ ও উড়ে যাওয়া সাদা গাংচিলের দল দেখা এখন আরও সহজ হবে। এক পাশের বিশাল সমুদ্র আর অন্য পাশের নারিকেল গাছের সারি, পরিচ্ছন্ন বেলাভূমি এবং ম্যানগ্রোভ বন সাগরকন্যাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
ঢাকা থেকে ৬ ঘণ্টায় কুয়াকাটা
ইতোমধ্যে সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে কুয়াকাটার বিভিন্ন হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের ভাড়ায় ৫০ শতাংশ ছাড় চলছে।
পর্তুগিজ জলদস্যু বাহিনী ‘নটুয়া’ থেকে পটুয়াখালী
কুয়াকাটার হোটেলে-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি ও হোটেল বনানীর মালিক শফিকুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে কুয়াকাটার হোটেল-মোটেলে পর্যটক আকর্ষণে ৫০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেতু দিয়ে চলার আনন্দ ভাগাভাগি করতে এ বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, পর্যটকদের কুয়াকাটা ভ্রমণ আরও আনন্দদায়ক করতেই আমাদের এ বিশেষ উদ্যোগ।
কুয়াকাটা হোটেলে-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কুয়াকাটা গেস্ট হাউসের মালিক মোতালেব শরীফ বলেন, আগে ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় আসতে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় লাগতো। এ দীর্ঘ ভ্রমণে পর্যটকরা ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর মাত্র ছয় ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় পৌঁছাবে বাসগুলো। এতে পর্যটকদের সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি ক্লান্তিও কমবে।
খুলছে দেড় হাজার কোটি টাকার সেতু, ৭ ঘণ্টায় ঢাকা-কুয়াকাটা
এদিকে পদ্মা সেতু চালু হলে কুয়াকাটায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের যে চাপ বাড়বে তা সামাল দিতে এবং সেবার মান বাড়ানো নিয়ে কাজ করছেন হোটেল ও মোটেল মালিকরা।
মুগ্ধতায় সাগর কন্যা কুয়াকাটা...
তিনি আরও জানান, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার পর্যটক কুয়াকাটায় অবস্থান করেন। পর্যটন মৌসুমে এ সংখ্যা তিন থেকে চারগুণ বাড়ে।
কুয়াকাটার অন্যতম সিকদার রিসোর্টের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. আল আমিন বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। সে অনুযায়ী আমরাও হোটেলে সেবার মান বৃদ্ধিসহ অবকাঠামোর উন্নয়ন শুরু করেছি। আমাদের এখানে আগে ১২টি ভিলা ও ৬৮টি রুম ছিল। বর্তমানে আরও ২০টি ভিলা ও আরও ৩৪টি রুম তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া ১৩-তলা বিশিষ্ট সিকদার টাওয়ার থেকে সরাসরি সমুদ্র, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগের সুবিধা রয়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। স্পিডবোট ও বোট সার্ভিসে ঘুরে বেড়াতে পারবেন অতিথিরা। সৈকত থেকে ট্যুরিস্ট বোটে করে যেতে পারেন প্রায় ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে ফাতরার বনে। এটি সুন্দরবণের একটি অংশ। এখানে নানা জাতের গাছপালা ছাড়াও রয়েছে হরিণ, কুমিরসহ নানা জাতের বন্যপ্রাণী। সব মিলে পর্যটকরা এখানে পেয়ে যাচ্ছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ফুল প্যাকেজ।
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম বাচ্চু বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পর্যটক কুয়াকাটায় আসবেন। সেজন্য ট্যুর গাইডদের পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি সৈকতকে আরও সুন্দর করারও চেষ্টা চলছে। পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সে বিষয়েও আমরা কর্মীদের উদ্বুদ্ধ ও প্রশিক্ষিত করছি।
এছাড়া পর্যটকদের জন্য হোটেল-মোটেলের পাশাপাশি হোম স্টের সুযোগ বাড়াতে কাজ চলছে।