‘প্রেমের টানে’ ভারত থেকে আসা যুবকের বিচার চান তরুণী

ভারতের তামিলনাড়ু থেকে যার ‘প্রেমের টানে’ বাংলাদেশের বরিশালে এসেছেন প্রেমকান্ত সেই তরুণী ও তার পরিবার ভারতীয় এই যুবকের বিচার দাবি করছেন। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করায় প্রচলিত আইনে তার বিচার দাবি করেন তারা।

যাকে প্রেমিকা হিসেবে দাবি করছেন প্রেমকান্ত কলেজপড়ুয়া সেই তরুণীর দাবি, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কতজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। সেভাবে ওই ছেলের (প্রেমকান্ত) সঙ্গেও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিয়ের প্রস্তাব দিলে প্রত্যাখ্যান করি। তখন সে দেখা করতে বাংলাদেশ আসবে বলে জানায়। তাকে বারবার নিষেধ করি। কিন্তু কোনোভাবেই তা মানতে নারাজ। একপর্যায়ে বরিশালে এসে ঝামেলা শুরু করে। সে কলেজের সামনে এসে ঘোরাঘুরি করে খুঁজতে থাকে। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে বলে, আমি নাকি তাকে লোক দিয়ে মারধর করিয়েছি। তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি যেমন মিথ্যা, তাকে অন্য লোক দিয়ে পিটিয়েছি সেটাও মিথ্যা।’

ওই তরুণী দাবি করেন, এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ তাকে ডেকে নেন। সেখানে সে ও তার বাবা-মাও ছিলেন। পুলিশ প্রেমকান্তকে জিজ্ঞাসা করেছে, তার কোনও অভিযোগ আছে কি—না, সে বলেছে ‘না, কোনও অভিযোগ নেই’। এরপর পুলিশ তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। ওই সময় থানায় অভিযোগ দেওয়ার জন্য বললে পুলিশ তরুণীকে সান্ত্বনা দিয়ে জানায়, প্রেমকান্তকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে এ নিয়ে আর কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু সে ঢাকায় না গিয়ে বরিশালে ঘোরাফেরা করে মিথ্যা কথা রটাচ্ছে।

‘পুলিশ বলেছে, সে ভারতে চলে যাবে এ নিয়ে ঝামেলার দরকার নেই। পুলিশ কথা দিয়েছিল এ নিয়ে আর কোনও ঝামেলা হলে তারা দেখবেন। এ কারণে ওই ছেলেটির বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। তা না হলে ওই দিন তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতো। আমাকে নিয়ে ছেলেটি সিনেমার মতো গল্প বলেছে— যা মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে— তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এতে করে সামাজিক ও মানসিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হতে হয়েছে’ যোগ করে ওই তরুণী ভারতীয় এই যুবকের বিচার দাবি করেন।

তরুণীর বাবা বলেন, ‘ওই ছেলেটির সঙ্গে আমার মেয়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়। এরপর ছেলেটি বরিশাল চলে আসে। ছেলেটির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে ও আমার মেয়েকে এয়ারপোর্ট থানায় ডেকে নেওয়া হয়। আমি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থানায় যাই। ওসি আমার মেয়ের কাছ থেকে সব ঘটনা শোনেন। মেয়ে যা আমার কাছে বলেনি— তা পুলিশের কাছে বলেছে। আমার মেয়ের সঙ্গে ওই ছেলের কোনও সম্পর্ক ছিল না— এটা সত্য। এখন ওই ছেলেটি ভারত থেকে এসে যেভাবে আমাদেরকে সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতি করছে— তার জন্য দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার চাই।’ একইসঙ্গে তার মেয়ের কোনও ক্ষতি যেন না হয় সেদিকে দেখার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান।

এ বিষয়ে আইন সহায়তা কেন্দ্র ব্লাস্টের প্যানেল আইনজীবী উজ্জ্বল কুমার দে বলেন, ‘ভারতের ছেলেটি বরিশালে এসে ১৬ বছরের এক তরুণীকে সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ ঘটনায় ওই তরুণী আইনি সহায়তা নিতে পারবে। এমনকি তরুণী ও পরিবার চাইলে ব্লাস্ট আইনি সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’

বরিশালের এয়ারপোর্ট থানার ওসি কমলেশ চন্দ্র হালদার বলেন, ‘ওই তরুণী যৌন হয়রানির শিকার হলে বরিশাল অথবা বরগুনার যেকোনও থানায় আইনি সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারবে। আমি তো মনে করেছিলাম, ঢাকার বাসে তুলে দিয়েছি- এখন সে ভারতে চলে যাবে। সে ভারতে না গিয়ে বরিশালে অবস্থান করে ওই তরুণীকে কোনোভাবে ক্ষতি করলে অবশ্যই আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।’

জানা গেছে, গত ২৪ জুলাই প্রেমকান্ত ওই তরুণীর সাথে দেখা করতে বরিশাল নগরীতে আসেন। এরপর তরুণীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ঘোরাঘুরি করে তাকে খুঁজতে থাকেন। ২৫ জুলাই প্রেমকান্তকে নগরীর কাশীপুর এলাকায় কে বা কারা মারধর করে। তার দাবি, ওই তরুণীর আরেক প্রেমিক এ কাজ করেছে। সেখান থেকে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ তাদের নিরাপত্তায় নিয়ে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলে তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু তিনি ঢাকায় না গিয়ে বরিশালেই ওই তরুণীর সন্ধান করছেন।

প্রেমকান্তের দাবি, তিন বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় এই যুবকের নাচের ভিডিও দেখে  বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন বরিশালের বরগুনার ওই তরুণী। এরপর থেকে তাদের কথা হতো। সে শুধু ‘প্রেমিকাকে’ সামনাসামনি দেখার জন্য দেশে আসে বলেও জানান।