শুক্রবার (৪ নভেম্বর) থেকে দুই দিনব্যাপী বরিশালের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে আগেভাগেই নগরী এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এদের বেশিরভাগই নৌযান ভাড়া করে এসেছেন। আর নৌযানেই পেতেছেন অস্থায়ী সংসার।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) সকালে ভোলা থেকে দোতলা লঞ্চ ও মাছ ধরার ট্রলারে করে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এসে কীর্তনখোলার পাড়ে নগরীর মুক্তিযোদ্ধা পার্কে অবস্থান নিয়েছেন। দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে লঞ্চ ও ট্রলারের মধ্যেই চলছে খাবারের আয়োজন। আবার কেউ কেউ বিশ্রাম নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের আলাপচারিতা ছিল গণসমাবেশকে ঘিরে এবং তাদের কর্মসূচি নিয়ে।
চরফ্যাশনের দক্ষিণ চরমানিকা ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি আনসার উদ্দিন বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে এসেছি। আমরা সবাই সমুদ্রগামী মাছের ট্রলার ভাড়া করে এসেছি। ১৮০ জন নেতাকর্মী দুই হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়েছি। তা দিয়ে দুই দিনের খাবার এবং নৌযানের ভাড়া দেওয়া হবে।
ভোলা থেকে দোতলা লঞ্চ রিজার্ভ করে এসে কীর্তনখোলার পাড়ে নোঙর করেছে আরও একটি দল। তারাও নিজেদের মধ্য থেকে চাঁদা তুলে আসা-যাওয়ার খরচ বহন করছে। সেখানে উপস্থিত চরআইচা থানা ছাত্রদলের কর্মী মো. নাজিম বলেন, গণসমাবেশ সফল করতেই কষ্ট করে বরিশালে এসেছি। আগেভাগে না এলে হয়তো আসা সম্ভব হতো না। এ কারণে বরিশালের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বুধবার রাতেই লঞ্চে রওনা হয়েছি। এরপরেও ভয়ে আছি, কোনও আক্রমণ হয় কিনা। লঞ্চে খাবার এবং ঘুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কুয়াকাটা থেকে বাস ভাড়া করে এসেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। একটি বাসেই ২০০ নেতাকর্মী এসেছেন বলে জানান সেখানে থাকা মোফাসেল লিটু। তিনি যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এছাড়া নগরীর আবাসিক হোটেলগুলোতেও বরিশালের ৫ জেলার নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েচেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন হোটেল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন হোটেলগুলোতে পুলিশ পরিদর্শন করে কোনও ধরনের সমস্যা হলে তাদের অবহিত করতে বলছে। এ সময় তারা প্রতিটি রুম তল্লাশি চালায়, অবৈধ কিছু আছে কিনা জানতে। একাধিক নেতারা বলেন, তাদের এ আচরণে আমরা হতভম্ব হয়েছি।
তবে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়েছে বরিশালের স্থানীয় নেতাদের ওপর। তাদের বাসায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাসার বাইরে সামিয়ানা টানিয়েও নেতাকর্মীদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি বরিশাল বেলস পার্ক মঞ্চের চারপাশ ঘিরে অবস্থান করছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। তারা সেখানে মঞ্চ তৈরির সহযোগিতা করার পাশাপাশি কয়েল জ্বালিয়ে রাত্রি যাপন করছেন।
এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কারা ধর্মঘট ডেকেছে তা আমাদের জানা নেই। কারণ এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু গণসমাবেশের নামে বরিশালের স্থিতিশীল পরিবেশকে অস্থিতিশীল করা হলে, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। এ জন্য আমরা প্রস্তুত।
গেল ২৬ অক্টোবর পাঁচ দফা দাবিতে বরিশাল থেকে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী বাসের চলাচল বন্ধের ঘোষনা দেয় বাস মালিক গ্রুপ। গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার বলেন, ধর্মঘট রাজনৈতিক কোনও বিষয় না। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নে ওই দুই দিন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
৩১ অক্টোবর রাতে ৪ ও ৫ নভেম্বর বরিশাল জেলায় থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধেরও ডাক দেওয়া হয়। থ্রি-হুইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পরিমল চন্দ্র বলেন, মহাসড়কে থ্রিহুইলারের চলাচল নির্বিঘ্নসহ পাঁচ দফা দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি।
তবে বরিশাল নৌ বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, একটি লঞ্চ ভাঙচুর করার প্রেক্ষিতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, গুলিতে নিহত নেতাকর্মীদের হত্যা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ৫ নভেম্বর বরিশালের বেলস পার্কে বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।