৪ কোটি টাকার সেতুতে উঠতে লাগে কাঠের মই

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কবাই ইউনিয়নের হানুয়া বাজার সংলগ্ন খালের ওপর তিন কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক দীর্ঘদিনেও নির্মিত হয়নি। এ কারণে কাঠ দিয়ে মই বানিয়ে সেতুতে উঠতে হয়। এভাবে দীর্ঘদিন সেতু পারাপারে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী।

হানুয়া বাজারের বাসিন্দা রাজ্জাক সিকদারসহ একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, দেড় বছর আগে সেতুর কাজ শেষ হয়। কিন্তু অ্যাপ্রোচ সড়ক না থাকায় সেতুটি ব্যবহার করতে পারছেন না এলাকাবাসী। এজন্য ঠিকাদার থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারা আজ না হয় কাল বলে সময়ক্ষেপণ করছেন। অ্যাপ্রোচ সড়ক না হওয়ায় স্থানীয়রা কাঠ দিয়ে মই বানিয়ে সেতু পার হচ্ছেন। ২০ ফুট উচ্চতার সেতুতে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে প্রায় ঘটে দুর্ঘটনা।

তারা আরও জানান, ‘সেতুর দুই পাড়ে রয়েছে দুটি বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, লঞ্চঘাট ও বাসস্ট্যান্ড। ওসব প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন স্কুলশিক্ষার্থী ও নারীরা। দীর্ঘদিনেও কাজ না হওয়ায় এখন অ্যাপ্রোচ সড়কের কথা বলেন না স্থানীয়রা। মই দিয়ে সেতু পারাপারে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন তারা।

কবাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল হক বাদল তালুকদার বলেন, ‘ওই সেতু দিয়ে আট গ্রামের বাসিন্দারা চলাচল করেন। দীর্ঘদিনেও অ্যাপ্রোচ সড়ক না হওয়ায় গ্রামের মানুষ আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। তাদের চলাচলের জন্য অ্যাপ্রোচ সড়ক করে দিতে আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করেছি। সেখান থেকে কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় একাধিকবার তাগাদা দিয়েছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে কর্মকর্তারা এসে সড়কের মাপ নিয়ে গেছেন। তখন মনে হয়েছিল, দ্রুত সময়ে হয়তো কাজ হবে। কিন্তু মাপ নেওয়ার ছয় মাস হয়ে গেছে। এখনও অ্যাপ্রোচ সড়ক হয়নি।’

মই বেয়ে সেতুতে উঠতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী

সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) অর্থায়নে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সেতু নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে কাজ শেষের সময়সীমা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেয় এলজিইডি। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে কাজ শুরু করেন ঠিকাদার নাসির মাঝি। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে সেতুর ঢালাই এবং ওপরের রেলিংয়ের কাজ শেষ হয়। সেতুর কাজ শেষ করে ঠিকাদার বিল উত্তোলন করে নিয়ে যান। কিন্তু সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে কোনও উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে ঠিকাদার নাসির মাঝি বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র সেতু নির্মাণের বরাদ্দ পেয়েছি। অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের কথা ছিল না আমাদের।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, ‘সেতু নির্মাণের সময় অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এজন্য ঠিকাদার কাজ করেননি। অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে অ্যাপ্রোচ সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হবে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ শুরু করতে পারবো আমরা।’