ছেলেকে মাদ্রাসার সহকারী সুপার বানাতে বাবার গোপন কমিটি

পটুয়াখালীর রহমগঞ্জ হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ছেলেসহ পাঁচ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিতে গোপনে কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে সাবেক সুপারিনটেডেন্টের বিরুদ্ধে। কমিটি গঠনের বিষয়টি মাদ্রাসার দাতা সদস্য, শিক্ষক ও অভিভাবকরা কেউ জানেন না বলে দাবি করেছেন।

মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষকরা জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে ছেলে সাইদুর রহমানকে নিয়োগ নিশ্চিত করতে কোনও ভোট ছাড়া গোপন নির্বাচনি প্রক্রিয়া দেখিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে সভাপতি হয় মাদ্রাসার সাবেক সুপার মাওলানা এম এ মান্নান। এসব কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সুপার নজরুল ইসলাম। এ বিষয়ে মাদ্রাসার দাতা সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী কেউ কিছুই জানেন না। তারা সোমবার বিকালে শুনেছেন এই কমিটির মাধ্যমে মাদ্রাসার সুপার ও সহকারী সুপারসহ মোট পাঁচটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াও শেষ করেছেন।

মাদ্রাসার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সহকারী সুপার ও বর্তমান শিক্ষক মাওলানা হারুনুর রশিদ বলেন, ২০২২ সালে মাদ্রাসায় কোনও  নির্বাচন হয়নি। অবৈধভাবে গোপনে কমিটি করে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আমি ওই মাদ্রাসার শিক্ষক হয়েও কমিটি এবং নিয়োগের বিষয় কিছুই জানি না।

অভিভাবক মহিবুল্লাহ বলেন, আমার মেয়ে এই মাদ্রাসায় বর্তমানে দশম শ্রেণিতে পড়ে। মাদ্রাসার পাশেই আমার বাসা। অথচ আপনাদের মাধ্যমে জানলাম, এই মাদ্রাসায় ২০২২ সালে ব্যবস্থাপনা কমিটি হয়েছে এবং ওই কমিটির মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। এখানে কোনও নির্বাচন হলে আমি দেখতাম এবং জানতাম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক জানান, মাদ্রাসার সাবেক সুপার মাওলানা এম এ মান্নানের ছেলে সাইদুর রহমানকে অবৈধভাবে সহকারী সুপার হিসেবে নিয়োগ দিতে অতি গোপনে কমিটি গঠন করে সভাপতি হয়েছেন নিজেই। এ ছাড়াও আরও চারটি পদে নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। অযোগ্য লোক নিয়োগ দিয়ে মাদ্রাসার ক্ষতি হোক এটা আমরা চাই না।

অভিভাবক ইউসুফ গাজী বলেন, বিগত বছরে আমি এই কমিটির নির্বাচিত সদস্য ছিলাম। যারা গোপনে এই কমিটি গঠন করেছে আমি তাদের বিচার চাই।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মাওলানা এম এ মান্নান ও নজরুল ইসলাম। তারা জানান, সবকিছু নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।

মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের রহমগঞ্জ হামিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা এম এ মান্নান ২০১৭ সালে অবসরে যান। তারপর থেকে এ পর্যন্ত চার জন ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন নজরুল ইসলাম। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে গোপনে ভোটবিহীন একটি কমিটি করে বোর্ড থেকে অনুমোদন করিয়ে নেন। এরপর মাদ্রাসায় সুপার, সহ-সুপার, নিরাপত্তাকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়া পদে ১৯ জুলাই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে গোপন ওই কমিটি গঠনের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।