বরিশালে বেড়েছে সয়াবিন চাষ

ঘরে বসেই বিক্রি, কম খরচে বেশি লাভ

উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় বরিশালে সয়াবিন চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। অনুকূল আবহাওয়া, উন্নত বীজ রোপণ এবং ওষুধ-কীটনাশক না লাগায় এবারও বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।

চাষিরা বলছেন, প্রতি বছর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় সয়াবিন চাষ বাড়লেও তেল উৎপাদন হচ্ছে না। পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তবে ঘরে বসেই বিক্রি করা যায়। এতে অন্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে যে পরিমাণ সয়াবিন উৎপাদিত হয়, তা দিয়ে পশুখাদ্যের চাহিদাও পূরণ হয় না। তেল উৎপাদনে যেতে হলে বর্তমান লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি বাড়াতে হবে। তবে ঘরে বসেই বিক্রি করে ভালো লাভ হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। ভালো ফলন এবং লাভের আশায় ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় বরিশালে সয়াবিন চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের

দিন দিন জেলায় সয়াবিন চাষ বাড়ছে জানিয়ে বরিশালের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘চলতি বছর সদরের শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের ছয় গ্রামের ১৩০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এর সঙ্গে জড়িত ২১৫ চাষি ও তাদের পরিবারের সদস্য। আগে এসব জমিতে মুগ ডাল চাষ হতো। কিন্তু যেভাবে পরিশ্রম করতেন সেভাবে লাভ হতো না চাষিদের। এ কারণে সয়াবিন চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। কারণ সয়াবিন চাষে তেমন খরচ নেই। গরু-ছাগলে খায় না। পোকাও আক্রমণ করে না। বিক্রিতে ঝামেলা নেই। ঘরে বসেই বিক্রি হওয়ায় লাভের পরিমাণ বেশি। এজন্য দিন দিন বাড়ছে চাষাবাদ।’

এক বিঘা জমি চাষ, বীজ রোপণ, সার এবং ওষুধে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা খরচ হয় উল্লেখ করে এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বিপরীতে ১০-১২ মণ সয়াবিন পাওয়া যায়। ১৪০০-১৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে ২০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়। অন্য ফসলে এত লাভ হয় না। জমিতে বীজ রোপণের তিন-চার মাসের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। এরপর ফলন বাড়ি নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নেন।’

শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের কৃষক জাকির মীর, কামরুল শরীফ ও গোলাম মোর্শেদসহ একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, আগে ওসব জমিতে মুগ ডাল চাষ করতেন। কিন্তু তেমন লাভ হয় না। এর মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে খরচ তোলাও যায় না। কিন্তু সয়াবিন চাষ অধিক লাভজনক। এ কারণে যার যতটুকু জমি আছে, তাতে চাষ করেছেন। আগামী মে মাসে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। বিক্রি করতে পাইকারদের কাছে যেতে হয় না। পাইকাররা লোক পাঠিয়ে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী টাকা দিয়ে বাড়ি থেকে সয়াবিন কিনে নিয়ে যান। এতে পরিবহন খরচ বেঁচে যায়।

বরিশাল জেলায় ২৮ হাজার ৫০ মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে

চাষাবাদ বাড়ার কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, অন্য ফসল চাষ করলে গরু-ছাগল ও পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে সময় দিতে হয়। কিন্তু সয়াবিন নিয়ে সে চিন্তা নেই। গরু-ছাগল সয়াবিন গাছ খায় না। পোকা আক্রমণ করে না। এমনকি অন্যান্য ফসলে নিড়ানি দিতে হয়। সয়াবিনে দিতে হয় না। পাশাপাশি কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার এবং ওষুধ ফ্রি দেওয়ায় চাষাবাদে খরচ কম হয়। এতে লাভের পরিমাণ বেশি থাকছে। এসব কারণে সয়াবিন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা।

বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন বরিশাল জেলায় উৎপাদন হয় বলে জানালেন বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. শওকত ওসমান। তিনি বলেন, ‘এবার জেলায় ২৮ হাজার ৫০ মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এটি পূরণ হবে। এরপর ভোলায় ১১ হাজার হেক্টর জমির বিপরীতে ১৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, পিরোজপুরে ১০ হেক্টর জমির বিপরীতে ১০ মেট্রিক টন, ঝালকাঠিতে ১৪ হেক্টর জমির বিপরীতে ১৮ মেট্রিক টন, পটুয়াখালীতে ১৫ হেক্টর জমির বিপরীতে ২৭ মেট্রিক টন, বরগুনায় পাঁচ হেক্টর জমির বিপরীতে সাত মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।’

এই পরিমাণ সয়াবিন থেকে তেল উৎপাদন সম্ভব নয় উল্লেখ করে শওকত ওসমান বলেন, ‘এগুলো পশুখাদ্যের জন্য ব্যবসায়ীরা কেনেন। পশুখাদ্যের জন্য যে পরিমাণ প্রয়োজন, তাও উৎপাদন হচ্ছে না। তবে প্রতি বছর উৎপাদন বাড়ছে। বর্তমান লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ গুণ উৎপাদন সম্ভব হলে তেল উৎপাদন করা যাবে। সে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছি আমরা।’