আগুনে ধ্বংসস্তুপ কুমিল্লার দৌলতগঞ্জ বাজার

 

কুমিল্লার লাকসাম সদরের দৌলতগঞ্জ বাজারে শুক্রবার রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় এখন সে স্থানটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। আগুনে বাজাড়ের মনোহরীপট্টি, স্বর্ণপট্টি ও কাপড়িয়া পট্টির শতাধিক দোকান-ঘর পুড়ে হয়েছে। এতে আনুমানিক শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।কুমিল্লার দৌলতগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ড

দমকল বাহিনীর ৮টি ইউনিট ৯ ঘণ্টা চেষ্টার পর শনিবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন লাগার পরপরই পুড়ে যাওয়া দোকান মালিক,কর্মচারী এবং আত্মীয় স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

দমকল বাহিনী ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানায়, শুক্রবার রাতে দৌলতগঞ্জ বাজারের মনোহরীপট্টির একটি কসমেটিক দোকান থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন মুহূর্তের মধ্যে টিনশেড দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। দমকল বাহিনীর লাকসামের ২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। পরবর্তীতে কুমিল্লা, চৌদ্দগ্রাম, চৌয়ারা, বরুড়া, সোনাইমুড়ি ও হাজীগঞ্জ থেকে আসা দমকল বাহিনীর মোট ৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

কিন্তু মনোহরী পট্টিতে প্লাস্টিক, আতশবাজি এবং কাপড় পট্টিতে ও কাপড়ের গুদামে আগুন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দমকল বাহিনীর সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় স্থানীয় মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ ৯ ঘন্টা চেষ্টার পর দমকল বাহিনীর ৮ ইউনিট সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে কাপড়িয়াপট্টির ৪৩টি দোকান, ১৬টি জুয়েলারি দোকান, ৪০টি জুয়েলারির কারখানা, একটি তৈলের কারখানা, দুটি খাবার রেস্তরাঁ, দুটি লাইব্রেরিসহ ছোট বড় দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গত ৫০ বছরেও এ বাজারে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। এদিকে আশ-পাশের পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি পেতে বেগ পেতে হয় বলে জানান দমকল কর্মীরা।Laksam-pic-2

অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় জুয়েলারি মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি সুভাষ বণিক জানান, ১৬টি জুয়েলারি দোকান এবং ৪০টি জুয়েলারির কারখানায় প্রাথমিকভাবে তিনি প্রায় ১শ কোটি টাকা ক্ষতির ধারণা করছেন।
কাপড় ব্যবসায়ী গোলাম ফারুক জানান, কাপড়িয়াপট্টিতে অবস্থিত ৪৩টি দোকান ও গুদামের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্ষতিও আনুমানিক শত কোটি টাকা হবে। অনেকে পুড়ে যাওয়া দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আহাজারি করেছেন। তারা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।

লাকসাম ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোবারক আলী জানান, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে কুমিল্লা, চাঁদপুর ও নোয়াখালী থেকে আসা ৮টি ইউনিটের অব্যাহত চেষ্টায় সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

লাকসাম থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, বাজার এলাকা ঘিঞ্জি হওয়ায় দমকল বাহিনীর গাড়ি ঠিকমতো প্রবেশ করতে পারেনি। পানি পেতেও বেগ পেতে হয়েছে। অনেক দূরে ভূমি অফিস পুকুর, জগন্নাথ দিঘি,থানা পুকুর,গোমতী নদী ও উপজেলার পুকুর থেকে পানি আনতে হয়।Laksam-pic-3

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পেয়েই স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. তাজুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম, কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. ইউনুছ ভূইয়া, পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক আবুল খায়ের, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, দৌলতগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবারক উল্লাহ কায়েসসহ ব্যবসায়ী নেতারা ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন।

/এআর/