‘আমরা ত্রাণের আশায় এই দেশে আসি নাই’

মরিয়ম বেগমমালয়েশিয়া থেকে এক হাজার ৪৭২ টন ত্রাণ এসেছে রোহিঙ্গাদের জন্য। এই ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে। এরকমই একটি জায়গা উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প। সেখানে লাইন ধরে বসে আছেন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। তাদের চোখে-মুখে ক্লান্তি আর অজানা আতঙ্কের ছাপ। তাদের কেউ হারিয়েছেন প্রিয় সন্তান, কেই হারিয়েছেন স্বামী বা স্ত্রীকে। নিজের ভিটে-মাটি হারিয়ে এখন অনেকটা নির্বাক এক মুঠো ত্রাণের অপেক্ষায়।

ত্রাণের আশায় লাইনে বসে থাকা ষাটোর্ধ রোহিঙ্গা নারী মরিয়ম বেগম বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমনিতেই বাংলাদেশে এসে আমরা অনেক ক্ষতি করে ফেলেছি। তার ওপর ত্রাণ আশা করা বোকামি। বাংলাদেশ আমাদের আশ্রয় না দিলে আমরা কোথায় যেতাম? মিয়ানমার সেনাবাহিনী এতদিনে আমাদের জীবন শেষ করে দিতো। তাই আমরা ত্রাণের আশায় এই দেশে আসি নাই। আমরা জীবন বাঁচাতে এই দেশে এসেছি। ত্রাণ নিয়ে আমাদের কোনও আগ্রহও নাই। আমরা চাই নিজ দেশে ফিরতে।’ত্রাণের আশায় রোহিঙ্গারা

১৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মরিয়ম বেগমের মতো ত্রাণের জন্য লাইনে অপেক্ষা করছিলেন ফাতেমা বেগম (৪০), সুফিয়া খাতুন (৩৬), মাজেদ (৬৫), ফজল আহমদ (৩৫) ও গুরা মিয়াসহ প্রায় ৫০টি পরিবারের ৫০ জন সদস্য। তারা প্রায় সবাই বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, খুব দ্রুত নিজ দেশে ফিরে যেতে চান। এই ত্রাণে তাদের বেশিদিন চলবে না। তাই এসব ত্রাণ পেয়ে খুশি হলেও রোহিঙ্গাদের দাবি একটাই, তারা যেন নিরাপদে তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়।  

এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দলটি। ওই সময় ওখানে থাকে ৫০টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণের প্যাকেট তুলে দেন মালয়েশিয়ান সংসদ সদস্য আবদুল আজিজ বিন আব্দুর রহিম। এর পর উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে ৫০ পরিবার ও টেকনাফের লেদা ক্যাম্পে ৫০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন তিনি।রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিরতণ

প্রাথমিকভাবে দেড়শ’ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান ত্রাণ বিতরণ সমন্বয় কমিটির প্রধান ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাইফুল ইসলাম মজুমদার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘পর্যায়ক্রমে ত্রাণ পাবে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার টেকনাফে এবং সাড়ে ৯ হাজার পরিবার আছে উখিয়ায়। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ত্রাণের মধ্যে চাল, ডাল, কফি, চিনি, খাদ্যশস্য, ভোজ্য তেল, কম্বল ও চিকিৎসা সামগ্রীসহ প্রায় ৩৫ ধরনের পণ্য রয়েছে।’ত্রাণ নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা

ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক বিএম মাজহারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সরকার যে ত্রাণ দিয়েছেন তা আগামি ২/৩ দিনের মধ্যে পুরোদমে বিতরণের কাজ শুরু করা হবে। এর আগে তালিকা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করা হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সীমান্ত পুলিশের ১২ সদস্য নিহত হয়। ওই হামলার জন্য রোহিঙ্গা মুসলমানদের দায়ী করে আসছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী।  এরপরই তাদের ওপর শুরু হয় দমন-পীড়ন। নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিতে গত ৩ ফেব্রুয়ারি  মালয়েশিয়ার জাহাজ নটিক্যাল আলিয়া থেকে যাত্রা শুরু করে। মঙ্গলবার জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি জেটিতে এসে নোঙর করে। রাতেই সড়ক পথে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ত্রাণ নিয়ে আসা হয়।

/এফএস/ 

আরও পড়ুন- 


ভূমিহীনদের ফাঁসিয়ে ঋণ তুলে ফেরারি আ.লীগের দুই নেতা!