বন্দরনগরী ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ

ট্রেনের ছাদে চড়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে বাড়িফেরা‘ঈদে যত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা যায় ততই ভালো। কারণ ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে, ততই যানজট বাড়বে। বাড়বে ভোগান্তিও। তাই আজই অফিস শেষে বাড়ি চলে যাচ্ছি’— বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া বাস স্টেশনে ঈদে বাড়ি ফেরার বিষয়ে বলছিলেন সরকারি কর্মকর্তা আবুল হাসনাত। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলেন, ‘আজ অর্ধবেলা অফিস ছিল, আগে থেকে প্রস্তুতি ছিল। তাই অফিস শেষে বাড়ির পথে রওনা দিচ্ছি। আগে গেলে একটু স্বস্তিতে বাড়ি ফেরা যায়। তাছাড়া স্বজনদের সঙ্গেও বেশি সময় থাকা যায়, তাই আজই চলে যাচ্ছি। ’

ঈদে আগে বাড়ি ফেরা নিয়ে একই ধরনের মত দিয়েছেন চা বোর্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা রাজিবুল হাসান। ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাজিবও ওই বাসস্টেশনে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন। মুন্সীগঞ্জের এই মানুষটি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদ যতই ঘনিয়ে আসে ততই সড়কে যানবাহন বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বাড়ে যাত্রীদের ভোগান্তিও। তাই আজ অফিস শেষেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছি। সেখানে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করবো, তারপর বাড়িতে যাবো।’

শুধু আবুল হাসনাত আর রাজিবুল হাসান নন, যাত্রাপথের ঝামেলা এড়াতে অনেকেই ঈদের ছুটি শুরুর আগেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার কার্যদিবস শেষ করেই অনেকে ছুটছেন গ্রামের পানে। সারাবছর যে যেখানেই থাকুন না কেন, ঈদ উপলক্ষে বছরে দু’বার বাড়ি ছুটে যান নগরবাসী। একঘেঁয়ে জীবনকে কয়েকদিনের জন্য ছুটি জানান তারা।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ঘরমুখো মানুষজীবিকার টানে যেসব মানুষ শহরে পাড়ি জমান তারা নাড়ির টানে গ্রামে যান দুই ঈদ উৎসবকে ঘিরে। স্কুল-কলেজের বন্ধুবান্ধব, পাড়া-পড়শী, প্রিয়জন, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা ও সময় কাটানোর সুযোগ হয় কেবল ঈদকে কেন্দ্র করেই।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়— নগরীর বহদ্দারহাট, দামপাড়া, বিআরটিসি, এ কে খান মোড় ও অলংকার মোড় বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। কেউ সপরিবারে, আবার কেউ বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন।

অন্যদিকে ঈদ উপলক্ষে ট্রেনে বাড়িফেরা শুরু হয়েছে বুধবার (২১ জুন) থেকে। প্রথম দিন শুধু ট্রেনের টিকেট কাটা যাত্রীরা যাতায়াত করেছে। ওইদিন ট্রেনে তেমন ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার ছিল প্রচুর ভিড়। এদিন আসনের বাইরেও অনেককে দাঁড়িয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে দেখা যায়। অনেকে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে বসে রওনা দিয়েছেন।

ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরতে মরিয়া ঘরমুখো মানুষচট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ রাজশাহীর বাসিন্দা এবাদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে ট্রেনের টিকিট কাটতে পারিনি। তারপরও এসেছি যদি কারও কাছে অতিরিক্ত টিকেট পাওয়া যায়। না পেলে দাঁড়িয়ে অথবা ছাদে যেভাবে হোক বাড়ি যাবোই। বাসে গেলে কয়েকবার বাস পরিবর্তন করতে হবে। সেই সঙ্গে সড়কে ব্যাপক যানজটের কবলেও পড়তে হয়। তাই কষ্ট হলেও ট্রেনেই বাড়ি যেতে চাই।’

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বুধবার ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় কম হলেও বৃহস্পতিবার যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড় ছিল। সময়মতো সব ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা যেন ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য আমাদের কয়েকটি টিম স্টেশনে কাজ করছে।’

ছবি: রবিন চৌধুরী

/জেএইচ/