ঈদের আমেজ নেই রাঙামাটিতে

ঈদের আনন্দ নেই রাঙামাটির আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেএবার ঈদের আনন্দ নেই রাঙামাটির বাসিন্দাদের মধ্যে। ভয়াবহ পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনায় সবার ঈদ আনন্দ যেন ম্লান। পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা কয়েক হাজার পরিবারের ঠাঁয় এখন নিকটবর্তী অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে যারা বসবাস করছেন তাদের মধ্যে ঈদের তেমন কোনও প্রস্তুতি দেখা যায়নি। তবে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন থেকে ঈদের জন্য আলাদা প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে।

বিএডিসি’র আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া জাহানারা বেগম বলেন, ‘আগে তো অনেক আশা ছিল, ছেলে-মেয়ে নিয়ে একসঙ্গে ঈদ করবো। এখন তো সেই আশা আর পূরণ হলো না। আমাদের তো বাড়িঘর কিছু নাই। এখন আশ্রয় কেন্দ্রে যতটুকু আল্লাহ মিলায় সেভাবে ঈদ করতে হবে।’

ragamati 3বিএডিসি আশ্রয় কেন্দ্রের মিনু আক্তার বলেন, ‘আগের সব কিছু তো শেষ। এখন বাড়ি নাই, ঘর নাই। আশ্রয় কেন্দ্রে পড়ে আছি। অনেক কষ্টে আছি তারপরও যা আছি ভালই আছি। ঈদ নিয়ে তেমন কোনও চিন্তা ভাবনা নাই। কোনও রকমে করব ঈদ।’

আশ্রয় কেন্দ্রের নুরু ইসলাম বলেন, ‘দুর্যোগের পর একটু ভেঙে পড়ছি। ছেলেমেয়ে নিয়ে কিভাবে ঈদ করবো না করবো একটু চিন্তায় আছি।’

রাঙমাটি সরকারি কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মো. সাহেদ বলেন, ‘আগের বার ঈদে বন্ধুদের নিয়ে অনেক মজা করছিলাম। অনেক জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। এবার সেরকম ইচ্ছে নাই। কোথায় যাবো, নতুন কাপড় নাই। বাবা-মার কাছে টাকা নাই। আমাদের বাড়ি নাই। আশ্রয় কেন্দ্রে থাকব।’

ragamati 2আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী সাহিদা আক্তার বলেন, প্রত্যেক বছর ঈদ নিয়ে যেভাবে পরিকল্পনা করি এ বছর তা নাই। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের বাড়িঘর কিছু নাই। আমরা এখন একটা আশ্রয় কেন্দ্রে আছি।

রাঙামাটি সরকারি কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া কাউসার ও সুফিয়া দম্পতি বলেন, ‘ভাই ও ভাবি মারা গেছেন। তাদের দুই এতিম সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রেই ঈদ করব। ঈদের নামাজটাই পড়া হবে হয়তো, আর কিছু করা সম্ভব হবে না।’

তবে আশার কথা শোনালেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘ঈদের আনন্দ থেকে এরা কেউই বঞ্চিত হবে না। আমরা সবাই এবার ঈদ করব আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের সঙ্গে। এটা তো ঠিক, নিজ বাড়িতে থেকে ঈদের যে আনন্দ তারা উপভোগ করত, তা আশ্রয়কেন্দ্রে সম্ভব না। তবে আমরা চেষ্টা করব তাদের পাশে থেকে ঈদের আনন্দটা ভাগাভাগি করতে। ঈদের দিন প্রতিটি কেন্দ্রেই সেমাইসহ অন্যান্য খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।’

জেলা প্রশাসন ছাড়াও রাঙামাটি রেড ক্রিসেন্টের তরুণ সদস্যরাও এবার তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা চারটি আশ্রয়কেন্দ্রের শিশুদের সঙ্গে ঈদ কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যুব রেড ক্রিসেন্টের দলনেতা সাইফুল উদ্দীন বলেন, ‘এবার আমরা ঈদ করব আমাদের দায়িত্বে থাকা চারটি আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষের সঙ্গে। পাশে থেকে কিছু সময়ের জন্য হলেও তাদের আনন্দে রাখতে চেষ্টা করব।’

পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটির ঈদ বাজারও জমেনি। শোকেবিহ্বল পুরো শহরের কোথাও নেই ঈদের কেনাকাটার ন্যূনতম উচ্ছ্বাস। শহরের গুরুত্বপূর্ণ তিন বাজার তবলছড়ি, বনরূপা ও রিজার্ভবাজারে গিয়েও দেখা মেলেনি কোনও ক্রেতার।

বৃহত্তর বনরূপা ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবু সৈয়দ বলেন, একদিকে পাহাড় ধসে ১২০ জনের মৃত্যু, অন্যদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়াসহ নানা সংকটে ব্যবসা-বাণিজ্যেও ধস নেমেছে। ঈদের বাজার মাটি হয়ে গেছে। আগামী তিন মাসেও ব্যবসার এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কিনা সন্দেহ।

/বিএল/