লংগদুর ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় গড়মিলের অভিযোগ

লংগদুতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘররাঙামাটির লংগদুতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি পরিবারের তালিকা করেছে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু সেই তালিকায় বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নাম না ওঠায় গড়মিলের অভিযোগ করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১৭৬টি, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৩৮টি, দোকান ১০টি, পাড়াকেন্দ্র ৩টি। তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের।

তিনটিলা পাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ভাগ্য চাকমা বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের যে তালিকা করা হয়েছে সেখানে আমাদের পাড়ার কিছু নাম বাদ পড়েছে এবং কিছু বাড়ির বিবরণে গড়মিল রয়েছে। আমার বাড়িটা পাকা কিন্তু সেখানে উল্লেখ আছে টিনসেড, আবার কিছু বাড়ি আধা পাকা অথচ তাদের বাড়ি পাকা লেখা হয়েছে।’

তিনটিলা পাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অরুণ টন চাকমা বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পুনর্বাসন তালিকায় তিনটিলা পাড়ায় কিছু নাম ওঠেনি। আবার কিছু বাড়িঘরের বিবরণ সম্পূর্ণভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এতে করে অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে। আমার বাড়িটি সেমি পাকা কিন্তু তালিকায় আছে টিনসেড। তাহলে আমি তো সঠিকভাবে ক্ষতিপূরণ পাবো না।’

তিনটিলা পাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ১নং আটারকছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা বলেন, তিনটিলা পাড়ায় ৩টি ও মানিকজোড় ছড়া এলাকায় ১টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে নাম তালিকায় ওঠেনি। আর মানিকজোড় ছড়া ও বাইট্টাপাড়া গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকায় ঘরের বিবরণ যেভাবে দেওয়া হয়েছে তিনটিলা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সেভাবে করা হয়নি। সেজন্য আজ (২৩ জুলাই) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি আমাদের আশ্বাস্ত করেছেন।

লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাদ্দেক মেহ্দী ইমাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার কাছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন এসেছিল। আমি সবাইকে আশ্বস্ত করেছি। কোনও সমস্যা হবে না। যেহেতু বাড়ি নির্মাণে কোনও ক্যাটাগরি ভাগ করে হবে না, সেহেতু কারও চিন্তার কোনও কারণ নেই।’

তিনি আরও জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো পুনবার্সনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, ১ জুন লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মোটরসাইলেক চালক নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ দীঘিনালার চারমাইল এলাকায় পাওয়া যায়। স্থানীয় বাঙালিরা এই ঘটনার জন্য পাহাড়ের আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দায়ী করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন সকালে লংগদুবাসীর ব্যানারে নয়নের লাশ নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা সদরে আসার পথে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় শতাধিক বাড়ি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

এদিকে, গত ৯ জুন খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে তারা নয়ন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয় বলে জানায় পুলিশ। নয়নের মোটরসাইকেলটিও দীঘিনালার মাইনী নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার রমেল চাকমা ও জুনেল চাকমা পুলিশকে জানায়,মোটরসাইকেল ছিনতাই করার জন্যই তারা নয়নকে হত্যা করে। তবে নয়ন হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মোটরসাইকেলটি কোথাও নিয়ে যেতে পারেনি তারা। পরে তারা মোটরসাইকেলটি মাইনী নদীতে ফেলে দেয়।

/বিএল/