সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পাহাড় ধসে উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের নাইল্যাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি অফিস রুমসহ মোট ৯টি ক্লাস রুমের একটি ভবন সম্পূর্ণ মাটির নিচে চাপা পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যবান সব সার্টিফিকেট। মাটিচাপা পড়েছে প্রায় দু’হাজার পাঠ্যবইসহ দেড় শতাধিক পড়ার বেঞ্চ ও ৩টি আলমিরা। পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ভবন। বিপদজনক ভবনের সামনে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে লাল পতাকা। ৪ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য অবশিষ্ট রয়েছে একটি মাত্র কক্ষ। এতে প্রাণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ক্লাস চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। বাকি ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করছে খোলা আকাশের নিচে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ লাখ টাকা ছাড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন স্কুল পরিচালনা কমিটি।
কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এত বড় বিপর্যয়ের পড়েও সংশ্লিষ্ট অধিদফতর, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কেউই দেখতে আসেনি।
তিনি আরও জানান, ক্লাস চলাতে পার্শ্ববর্তী মাঝিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ধার করা হয়েছে বেঞ্চ।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. আজগর আলী জানান, এভাবে চলতে থাকলে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ফলাফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকবে শতভাগ।
ঘাগড়া ইউনিয়নের ঘাগড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঘাগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮টি কক্ষের মধ্যে ৩টি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। পরিত্যক্ত করা হয়েছে কক্ষগুলিকে। পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রী নিয়ে অবশিষ্ট কক্ষগুলিতে গাদাগাদি করে ক্লাস চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের স্যানিটেশন ও পানি ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা পলিমাটিতে ভরে গেছে পুরো মাঠ। পাশাপাশি থাকা ঘাগড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাঁচা ঘরসহ সব মালামালই পানিতে ভেসে গেছে। অবশিষ্ট যা আছে তাও সম্পূর্ণরূপে মাটিচাপা পড়েছে। দুটি স্কুলের একাডেমিক ভবন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
ঘাগড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চন্দ্র দেওয়ান জানান, বন্যা ও পাহাড় ধসের পর প্রায় দু মাস পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত এসব স্কুলগুলো দেখতে শিক্ষা অধিদফতরের কোনও টিম দূরে থাক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দেখাও মেলেনি।
তিনি আরও জানান, এভাবে চলতে থাকলে এর প্রভাব জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ওপর পড়বে এতে কোনও সন্দেহ নেই।
এছাড়াও কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘাগড়া ইউনিয়নের হারাঙ্গীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, উত্তর মুবাছড়ি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এসব স্কুলগুলোর তেমন একটা ক্ষতি না হলেও সুষ্ঠুভাবে পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকরা।
তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর তালিকা আমি তাৎক্ষণিকভাবে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরে পাঠিয়েছি।’
এত বড় দুর্যোগের পর স্কুলগুলো পরিদর্শনে যাওয়া হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় ওই মুহূর্তে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।’
যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পর শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুল পরিদর্শন করেছেন বলে জানালেও সংশিষ্ট প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা বলেছেন কেউ আসেননি তাদের খবর নিতে।
/এআর/