বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাখাইনে যদি এই রকম নেতার জন্ম হতো, আজ দেশ স্বাধীন না হোক, অন্তত মিয়ানমারের নাগরিকত্ব তো পেতাম।’
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের খোয়ারবিল গ্রামে জন্ম শতবর্ষী হাজমা খাতুনের। এই নারীর দাবি, বয়স তার ১০৫ বছর পেরিয়ে গেছে। জন্ম থেকেই রাখাইনে বেড়ে ওঠা । সংসার জীবনে দুই মেয়ে ও পাঁচ ছেলের জননী তিনি। স্বামী মোহাম্মদ কালু মারা যাওয়ার পর থেকে ছেলে জকির আলমের সংসারে আছেন। কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ঢালারমুখ নতুন রোহিঙ্গা বস্তিতে হাজমা খাতুনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নয়, ব্রিটিশ আমলের যুদ্ধও দেখেছেন বলে দাবি হাজমা খাতুনের। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হিন্দু, মুসলিম অনেকেই পালিয়ে রাখাইন রাজ্যে আমার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আমার স্বামী মোহাম্মদ কালু তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। তখন আশ্রিত মানুষদের প্রতিদিন রান্না করে খাইয়েছি। সেবাযত্ন করেছি। আজ নিজের সেই দেশ ছেড়ে এই দেশেই (বাংলাদেশে) আমাকে আসতে হলো।’
শতবর্ষী এই বৃদ্ধা বলেন, ‘১৯৭৮ সালে একবার পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলাম। ছিলাম টেকনাফের হ্নীলার একটি রোহিঙ্গা বস্তিতে। মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় আবার ফিরে যাই নিজ জন্মভূমি রাখাইনে। এরপর আর কখনও আসতে হয়নি বাংলাদেশে। চৌদ্দ পুরুষের ভিটে বাড়ি ছেড়ে আসতে চাইনি। কিন্তু, ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! আবার ছাড়তে হলো নিজের জন্মভূমি। এই বাংলাদেশ না থাকলে আজ কী যে হতো!’ কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন বৃদ্ধা হাজমা খাতুন।
তিনি আরও বলেন, ‘বাড়িতে গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু রয়েছে। ধানের চাষ করেছি ১০ কানি (চার একর)। মাঠে সবুজের হাতছানি। কিছুদিন পরেই ধান উঠবে ঘরে। কিন্তু, খেতে দিলো না মগরা (অমুসলিম)। যেদিন আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান শামসুল আলমকে সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে হত্যা করলো, তার পরের দিন ভোর রাতেই বের হই বাংলাদেশে উদ্দেশে। সঙ্গে ছেলে ও নাতি-নাতনিসহ প্রতিবেশী প্রায় একশো জনের মতো দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন বাংলাদেশের সীমান্তের উদ্দেশে।’
এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবরের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একইভাবে হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসেন প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা। এরপর আন্তর্জাতিক মহল নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমার সরকারের ওপর। কিন্তু এর কোনও তোয়াক্কা না করে রাখাইনে ফের সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র