উখিয়ার কুতুপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি লাখো রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে কুতুপালং এলাকায়। এই রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা দিতে বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শ্রেণিকক্ষ বিভিন্নভাবে দখল হয়ে গেছে। এ কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে মেডিক্যাল টিম, অন্য দুটিতে আনসার ও পুলিশ ব্যারাক, বিদ্যালয়ের নিচে লঙ্গরখানার রসদপাতি ও মাঠে বানানো হয়েছে লঙ্গরখানার চুলা।’
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ে ৫৭৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। রোহিঙ্গা আসার আগে প্রতিদিন শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল। কিন্তু, এখন শতকরা ৪০ থেকে ৪৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি। দিন দিন এই হার আরও কমে যাচ্ছে।’
একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সামশুল আলম ও শিক্ষিকা স্নিগ্ধা বড়ুয়া বলেন, ‘শুধু শিক্ষার্থী নয়, সড়কে যানজট, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা কারণে শিক্ষকরাও ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। অথচ ২০ নভেম্বর পিএসসি পরীক্ষা।’
ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী অর্পা বড়ুয়া, রতন শর্মা, উম্মে হাবিবা ও সোহেল বড়ুয়াসহ অনেক শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পরিবেশ আগের মতো নেই। শ্রেণিকক্ষ দখল, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা, রাস্তাঘাটে যাতায়াত সমস্যাসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ কারণে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে যায়।
স্থানীয় অভিভাবক হাজী জলিল আহমদ, আব্দুল আজিজ ও শফিউল্লাহ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। বিদালয়ের চারপাশে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর কারণে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে সন্তানরা।’
উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছেনোয়ারা বেগম বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আমরা মানবিক দৃষ্টিতে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এই সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনাও আমরা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। কিন্তু, দিনদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে বেহাল অবস্থা হচ্ছে, তা নিয়ে সবাই খুবই চিন্তিত।’
উখিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার ধর বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে এই এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন খুব শিগগিরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন:
রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন হবে ঠেঙ্গারচরে, এগিয়ে চলছে ভূমি উন্নয়নের কাজ
বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ১৬৩৯ কোটি টাকা সহায়তা প্রয়োজন: জাতিসংঘ