রাঙামাটির কাপ্তাই সড়কে মোরঘোনা এলাকার জুমিয়া অনিল চাকমা বলেন, ‘পাহাড় ধসের ফলে জুম চাষের জায়গা কমে গেছে। তারপরও যেটুকু জায়গাতে আমার চাষ করেছি,তাতে ফলন গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে।’
তার অভিযোগ, ‘জুম চাষের সমস্যা হলেও কৃষি কর্মকর্তারা কোনও খবর নেয়নি। জলে ভাষা জমিতে চাষ করলে তখন তাদের দেখা যায়। জুমে যে পরিমাণ ধান পাওয়া যায় তাতে কয়েক মাস চলে। কৃষি বিভাগ যদি এমন কোনও জাতের ধান আমাদের দিতো যা চাষ করলে ফলন ২-৩ গুণ বেশি হবে, তাহলে জুমের ধান দিয়ে আমরা সারা বছর চলতে পারতাম।’
একই এলাকার জুমচাষি চম্পা চাকমা বলেন, ‘গত বছর জুমে ২০ কেজি ধান রোপণ করে ৪/৫ বস্তা ধান হয়েছিল। এবার ১৫/২০ বস্তা হতে পারে। গত বছরের তুলনায় এবারে জুমে ফলন ভালো হয়েছে।’
ধান কেটে মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত জুমচাষি মঙ্গল চাকমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের জুমের সব ধান কাটা শেষ। সবজিগুলো এখনও আছে। পাহাড় ধসের কারণে অনেকে জুম চাষ করেনি। যারা করেছে তারা ভালো ফলন পেয়েছে।’
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র মতে, জুমচাষিরা পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালের জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে পাহাড় জুম চাষের উপযোগী করে তোলে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে একসঙ্গে ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রকম বীজ রোপণ করে। এর মধ্যে এখন ধান কাটা হচ্ছে।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী পরিচালক কৃঞ্চ প্রসাদ মল্লিক জানিয়েছেন, ‘আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমির জুমের ধান আবাদের। তবে আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৯১০ হেক্টর কম জমিতে জুম চাষ হয়েছে। আশা করছি এ জমি থেকে এবার ৫ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ধান পাওয়া যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নতুন কিছু প্রজাতির ধান আগামী বছর থেকে জুমিয়াদের দিতে পারবো। সেগুলো প্রায় প্রতি হেক্টরে ৩ টন করে ধান উৎপাদন হবে।’
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনপদের লোকজন জুম চাষ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। যে বছর জুমে ভালো ফলন হয় না সেবছর অনেকেই খাদ্য সংকটে থাকেন। চলতি বছর বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের জুমিয়া পরিবারগুলো এবার খাদ্য সংকটে ছিল।