৬ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ ছিল নাখালপাড়ায় নিহত ‘জঙ্গি' নাফিস

নিহত ‘জঙ্গি’ নাফিসরাজধানীর নাখালপাড়ায় ১২ জানুয়ারি র‌্যাবের অভিযানে নিহত ‘জঙ্গি' আব্দুল্লাহ ওরফে নাফিস গত বছরের ৬ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ ছিল বলে পুলিশ জানায়। ছেলের নিখোঁজের ঘটনায় ৭ অক্টোবর তার বাবা নজরুল ইসলাম চকবাজার থানায় একটি ডায়েরি করেছিলেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম নগরীর কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় বাড়ি থেকে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয় নাফিস। এই প্রসঙ্গে পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার  হুমায়ুন কবির বলেন, ‘নাফিস চট্টগ্রাম কলেজের পূর্ব-গেট সংলগ্ন ইউনূস বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতো। গত বছরের ৬ অক্টোবর বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় সে। এ ঘটনায় তার বাবা নজরুল ইসলাম চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন ।’
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) বিকালে চট্টগ্রাম কলেজের পূর্ব গেট এলাকায় নাফিসের বাবার দোকান ‘শাহ আমানত ডিপার্টমেন্টাল স্টোর’-এ গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, ছেলের  লাশ শনাক্তের জন্য তিনি র‌্যাবের সঙ্গে ঢাকায় গিয়েছেন। দোকান দেখাশোনা করছিলেন নাফিসের ফুফাতো ভাই মো. সাইফুদ্দিন। তিনি ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ওমানে থাকি, দেড় মাস আগে দেশে এসেছি। মামা (নজরুল ইসলাম) ঢাকায় গেছেন, তাই দোকানে বসেছি।’ নাফিস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে ছোট বেলা থেকে মেধাবী ছিল। স্কুলে স্কাউট করতো, বিএনসিসি সদস্য ছিল। নাফিসের বাবাও দীর্ঘদিন ওমানে ছিলেন। এরপর ২০০৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের পূর্ব গেট এলাকায় এই দোকানের পজিশন কিনে নেন। এরপর এ দোকান পরিচালনার পাশাপাশি দোকান থেকে আনুমানিক ১০ গজ দূরে ইউনুস ভবনে পরিবার নিয়ে থাকছেন। ৪ থেকে ৫ বছর আগে নাফিসের মা’র সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর তিন বছর আগে মামা আবার বিয়ে করেন।’

সৎ মায়ের সঙ্গে নাফিসের সম্পর্ক কেমন ছিল, জানতে চাইলে সাইফুদ্দিন বলেন, ‘নাফিস ও তার একজন বোন আছে। নিজের ছেলে-মেয়ের মতো আদর-যত্ন করতে হবে এমন শর্ত দিয়ে মামা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। মামি (নাফিসের দ্বিতীয় মা) অনেক ভালো, নাফিসদের নিজের ছেলে-মেয়ের মতোই আদর করতেন।’

দোকানে সাইফুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রতিবেশী একজন যুবক নিজ থেকে জানান, ‘নাফিসকে ছোট বেলা থেকে দেখেছি। সে অনেক শান্ত ছেলে। তবে ক্লাস এইটে ওঠার পর তার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন দেখেছি। ক্লাস এইটে ওঠার পর সে কথাবার্তা কম বলতো।’

নাফিসের বাবার দোকানের সঙ্গে লাগানো একটি ওষুধের দোকানে অনেক দিন থেকে কাজ করছেন সুব্রত সিকদার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওষুধের এই দোকানটি নাফিসের চাচার। আমি গত আট বছর ধরে এই দোকানে চাকরি করছি। ছোট বেলা থেকে নাফিসকে দেখে আসছি। সে ছোট বেলা থেকেই অনেক নম্র-ভদ্র ছিল। সে প্রায় প্রতিদিনই দুই একবার দোকানে আসতো। আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতো। তার মধ্যে তেমন কোনও উগ্রতা দেখা যায়নি।’

নিহত ‘জঙ্গি’ নাফিসের বাসা ইউনুস ভবনের পাশের ভবনের নিচতলায় খাবারের দোকানদার দীল মোহাম্মদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তার বাবা অনেক ভালো মানুষ। তাকেও কখনও খারাপ ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা দিতেও দেখিনি। সে কিভাবে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়লো বুঝতে পারছি না।’

তবে এ ব্যাপারে শনিবার (২০ জানুয়ারি) নাফিসের বাবা স্থানীয় ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় তিনি জানান, ‘নাফিস সম্পর্কিত সব তথ্য পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।’ কোনও কিছু জানার থাকলে পুলিশের কাছ থেকে জেনে নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন নাফিসের বাবা। 

এ প্রসঙ্গে এডিসি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘নাফিস ৬ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ রয়েছে উল্লেখ করে তার বাবা থানায় জিডি করেন। ওই জিডির সূত্র ধরে নিখোঁজ নাফিসকে খুঁজতে গিয়ে আমরা গত ১ জানুয়ারি নগরীর মাদারবাড়ি এলাকার জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাই। যে আস্তানা থেকে নব্য জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘র‌্যাব নাখালপাড়ায় নিহত তিন জঙ্গির ছবি প্রকাশের পর ওই ছবিগুলো নিখোঁজ নাফিসের পরিবারের সদস্যদের দেখালে তারা নাফিস উল ইসলাম বলে একজনকে শনাক্ত করেন। নাফিস জঙ্গি তালিকায় আব্দুল্লাহ নামে পরিচিত।’’

উল্লেখ্য, গত ১২ জানুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হয়। এর মধ্যে মেজবাহ নামে একজনের পরিচয় আগেই পাওয়া গেছে।অন্য দু’জনের পরিচয় জানতে ১৮ জানুয়ারি তাদের ছবি প্রকাশ করে র‌্যাব। সেই ছবি কাউন্টার টেরোরিজম চট্টগ্রাম ইউনিটের নজরে গেলে তারা ছবিগুলো নিখোঁজ নাফিসের পরিবারকে দেখায়। ছবি দেখে নাফিসকে শনাক্ত করেন তার বাবা নজরুল ইসলাম।

এর আগে গত বছরের ৬ অক্টোবর বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় নাফিস। বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় নাফিস ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় নাফিসের বাবা নজরুল ইসলাম চকবাজার থানায় গত ৭ অক্টোবর একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন।

নাফিসের বাবার দায়ের করা জিডির সূত্র ধরে নিখোঁজ নাফিসকে খুঁজতে গিয়ে পুলিশ গত ১ জানুয়ারি নগরীর মাদারবাড়ি এলাকার জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায়। যে আস্তানা থেকে নব্য জেএমবির সুইসাইডাল স্কোয়াডের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নব্য জেএমবির এ তিন সদস্য নগরীর সদরঘাট থানায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল।

আরও পড়ুন: নাখালপাড়ায় নিহত ‘জঙ্গি আব্দুল্লাহ’ চট্টগ্রামের নাফিস