অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর লাশ গুম চেষ্টার অভিযোগ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে

মারিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারচাঁদপুরের মতলবে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর লাশ গুম করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে মারিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে। নিহতের নাম টগি রানী সরকার (৪২)। সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তার লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) রাজন কুমার দাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহত টগি রানী উপজেলার কলাকান্দা গ্রামের হিন্দুপাড়ার ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকারের স্ত্রী।











নিহতের পরিবারের সূত্রের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, টগি রানী রবিবার (২১ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় গর্ভপাত করানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর সারাদিন তিনি নিখোঁজ ছিলেন। সন্ধ্যায় তার স্বামী ক্ষিতিশ চন্দ্র ছেঙ্গারচর বাজারের মারিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে তালাবদ্ধ দেখেন। এরপর সব ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে রাত ৮টায় আবারও মারিয়া জেনারেল হাসপাতালে যান। সেখানে মালিকের সঙ্গে কথা বললে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়, টগি রানী নামে এখানে কেউ চিকিৎসা নিতে আসেননি।
সোমবার ভোরে উপজেলার বড় ষাটনল বেড়িবাঁধের পাশে সেচ ক্যানেলে পথচারীরা লাশ দেখতে পেয়ে ইউপি সদস্যকে জানান। খবর পেয়ে টগি রানীর লাশ উদ্ধার করেন মতলব উত্তর থানার ওসি মো. আনোয়ারুল হক। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

নিহতের স্বামী ক্ষিতিশ চন্দ্রের দাবি, ডাক্তার ছাড়াই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ গর্ভপাত করানোর কারণে তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ লাশ গুম করার চেষ্টায় বড় ষাটনল বেড়িবাঁধের পাশের সেচ ক্যানেলে ফেলে রেখে আসে।
খবর পেয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) রাজন কুমার দাস ঘটনাস্থল এবং মারিয়া জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডাক্তার ছাড়া হাসপাতালের পরিচালক নিজেই গর্ভপাত করেছেন। আমাদের কাছে খবর আছে, ক্লিনিকের পরিচালক আফরোজা আক্তার ঝুনু পরিবার পরিকল্পনা সহকারী (এফডব্লিউএ) হওয়ায় তিনি নিজেই এসব বিষয় পরিচালনা করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘রোগীর লাশ ও আলামত গুম করতে চেয়েছিল ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। আমরা লাশ উদ্ধার করে মারিয়া জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করে কিছু আলামত জব্দ করছি।’
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, ‘এই ঘটনায় মারিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক আফরোজা আক্তার ঝুনু ও কর্মচারী শিখা আক্তারকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া আরও দুই কর্মচারী ও দুই গাড়ি চালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘটনার আলামত সংরক্ষণে ক্লিনিক তালাবদ্ধ করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে নিহতের স্বামী ক্ষিতিশ চন্দ্র বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’
মতলব উত্তর থানার ওসি মো. আনোয়ারুল হক বলেন,‘এটা একটা মর্মান্তিক ঘটনা। হত্যার পর লাশ গুম করার ঘটনা দুঃখজনক। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের স্বামীর অভিযোগ পাওয়ার পর হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় দুই জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদেরও আটকের চেষ্টা চলছে। আলামত সংরক্ষণে ক্লিনিকটি অস্থায়ীভাবে তালাবদ্ধ করা হয়েছে।’