মানিকছড়ি থানার ওসিকে স্ট্যান্ডরিলিজ

খাগড়াছড়িখাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরোধের জেরে অবশেষে স্ট্যান্ডরিলিজ হয়েছেন মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইনুদ্দিন খান।  সোমবার (২২ জানুয়ারি) বিকালে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান এক আদেশে ওসি মাইনুদ্দিন খানকে বান্দরবান জেলা পুলিশ লাইন্সে এবং মানিকছড়ি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তালাত মাহমুদকে মানিকছড়ি থানার ওসি হিসেবে বদলির আদেশ জারি করেন।

ওসির স্ট্যান্ডরিলিজের বিষয়টি পুলিশ সুপার আলী আহম্মেদ খান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ নভেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি সীমান্তবর্তী নয়াবাজার এলাকায় ফরেনার্স চেকপোস্ট উদ্বোধন করা হয়। ফরেনার্স চেকপোস্টের একটি অংশে পুলিশ ও অন্য অংশে প্রশাসনের লোক থাকার কথা। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর মানিকছড়ি থানার ওসি মো. মাইনুদ্দিন খান প্রশাসনের লোকজন থাকার অংশের চাবি চাইলে মানিকছড়ির ইউএনও আহসান উদ্দিন মুরাদ তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বক্তৃতা দিতে না দিয়ে মাইক সরিয়ে দেন মানিকছড়ি থানার ওসি মাইনুদ্দিন খান। এই ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উদ্দিন মুরাদ বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে অবগত করেন। ১০ জানুয়ারি রাতে ওসি মাইনুদ্দিন খানের হাতে মানিকছড়ি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তৌফিকুল ইসলাম নাজেহাল হওয়ার অভিযোগ উঠে।  শনিবার (২০ জানুয়ারি) মানিকছড়ি রানী নীহার দেবী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় বিক্ষোভ করে। তারা প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল আহম্মদকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ তুলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উদ্দিন মুরাদের অপসারণ দাবি করে।

মানিকছড়ি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তৌফিকুল ইসলাম জানান,  ১০ জানুয়ারি মানিকছড়ি সার্কেলের একটি অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে চট্টগ্রাম রেফার করেন। ১২ জানুয়ারি তার বডিগার্ড তাকে জানায় তার অস্ত্র ওসি মাইনুদ্দিন খান নিয়ে গেছে। বিষয়টি জানতে থানায় গেলে ওসি মাইনুদ্দিন তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। চেইন অব কমান্ড মানেননি। এই কারণে তিনি প্রতিকার চেয়ে আইজিপির নিকট দরখাস্ত করেন।

ওসি মাইনুদ্দিন খান বলেন, সহকারী পুলিশ সুপারের কাছে কোনও অস্ত্র থাকে না। বডিগার্ডের কাছে অস্ত্র থাকে। সহকারী পুলিশ সুপার কর্মস্থলে না থাকলে বডিগার্ড সেই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে না বিধায় তা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জমা রাখা হয়েছে।

সহকারী পুলিশ সুপারের সঙ্গে কোন বিরোধ নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ১০ তারিখ রাতে তিনি একজনের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে ভাঙচুর করেছেন। সেই বিষয়ে পুলিশ সুপারের কাছে দরখাস্তও করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী ফরেনার্স চেকপোস্টের দায়িত্ব পুলিশের, সেখানে ইউএনও সাহেব কেন হস্তক্ষেপ করছেন; নিজেই বিরোধের সৃষ্টি করছেন। তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন মুরাদ বলেন, ‘ওসি সাহেব নিজেকে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি মনে করেন। তিনি তার দফতরেইতো চেইন অব কমান্ড মানেন না। আমরাতো ওনার কাছে কিছুই না। তিনি আমাকে হেয় করার জন্য ছাত্রছাত্রীদের আমার বিরূদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন। শিক্ষকদের সঙ্গে আমার অসদাচরণ করার কোনও কারণ নেই। ৩০ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষার দিন সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্নের জন্য আমি কড়াকড়ি করেছি। তাছাড়া যদি আমি সেদিন অসদাচরণ করি, তাহলে ২২ দিন পরে প্রতিবাদ হবে কেন ?’

জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ওসি ও ইউএনওর বিরোধ তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আছেন। তারা তদন্ত প্রতিবেদন দিলে আমরা পরবর্তী কার্যক্রমে যাবো।’

পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান বলেন, ‘ওসি ও সহকারী পুলিশ সুপারের দ্বন্দ্ব বিষয়ে দরখাস্ত-পাল্টা দরখাস্ত পাওয়া গেছে। আমরা তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’