কুমিল্লায় তিন উপজেলার প্রশাসন চলছে নারী নেতৃত্বে

প্রথমে মেঘনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা পারভীন, দ্বিতীয় মুরাদনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম, তৃতীয় সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রূপালী মণ্ডল

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন অনেক এগিয়ে গেছে। বর্তমানে প্রশাসন, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও বিভিন্ন চাকরিতে বাংলাদেশের নারীদের অংশগ্রহণ ও অগ্রগতির চিত্র সারাবিশ্বে প্রশংসিত। নারীর এই অগ্রযাত্রায় পিছিয়ে নেই কুমিল্লা জেলাও। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলা দক্ষভাবে সামলাচ্ছেন তিন নারী ইউএনও।

জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা যায়, পুরুষ কর্মকর্তা ছাড়া সমাজ উন্নয়ন সম্ভব নয় এ ধারণা ভুল প্রমাণিত করেছেন সদর দক্ষিণ, মুরাদনগর ও মেঘনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত তিন নারী। তারা সফলতা আর নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এই তিন কর্মকর্তারা দক্ষতার সঙ্গে উপজেলার সব বিভাগের কাজকর্মের সমন্বয় ও তদারকিসহ জেলার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জনস্বার্থে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড,তদারকি-বাস্তবায়ন, মাদক নির্মূল, ইভটিজিং প্রতিরোধ, বাল্যবিবাহ রোধ, শিক্ষার উন্নতকরণ, জনদুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ তৃণমূলের নানা কাজ দক্ষতার সঙ্গে প্রতিনিয়তই সম্পন্ন করছেন।

তিন নারী ইউএনও হলেন, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রূপালী মণ্ডল, মুরাদনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম এবং মেঘনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা পারভীন।

ইউএনও রূপালী মণ্ডল জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে প্রায় দুই বছর সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২৮ তম ব্যাচের কর্মকর্তা। এর আগে তিনি কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এসিল্যান্ড হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

তিনি বাংলা ট্রিবিউন এর সঙ্গে আলাপকালে বলেন,‘নারী ইউএনও হওয়ার কারণে আমাকে কোনও ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়নি। তবে নারীর অধিকার আদায়ে আমাদের পরিবার ও সমাজে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। সমাজের সর্বস্তরে নারীর অধিকার আদায়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে পারলে, চলার পথে নারীরা কোনও সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবে না। রূপালী মণ্ডল আরও বলেন, প্রশাসন, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, চাকরিসহ নানা ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারী এখনও পিছিয়ে রয়েছে। তৃণমূল নারীরা এখনও মা-বাবা, স্বামী, পরিবার ও সমাজের কাছে অবহেলিত। তারা সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার। এছাড়াও নারীরা ধর্ষণ ও বাল্যবিবাহসহ যৌতুকের জন্য স্বামীর কাছে নির্যাতন হচ্ছেন। আমাদের সমাজ থেকে এগুলো দূর করতে পারলে নারীর অধিকার আদায় আরও  সহজ হবে।

দুই মাস আগে মুরাদনগর উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন মিতু মরিয়ম। তিনি ২৭ তম ব্যাচের কর্মকর্তা। মিতু মরিয়ম এর আগে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইউএনও একটি পদের নাম। সেই ক্ষেত্রে আমি নারী না পুরুষ তা কোনও বিষয় না। ইউএনও হওয়ার আগে ও পরে আমি নারী হিসেবে কোনও প্রতিবন্ধকতার শিকার হইনি। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও কোনও অসুবিধায় পড়তে হয়নি।

মিতু মরিয়ম আরও বলেন,‘১৯৯১ সাল থেকে দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরাই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের স্পিকার নারী। এছাড়া দেশের রাজনীতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও  প্রশাসনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন নারীরা। তবে এটাও ঠিক এখনও অনেক নারী সমাজ ও পরিবারের কাছে অবহেলিত। তারা এখনও নিজের অধিকার ভোগ করতে পারছে না। তারা প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা, বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। তবে ইদানিং বাল্যবিবাহ, স্বামীর নির্যাতন, যৌতুদের দায়ে নারী নির্যাতন, পারিবারিক সহিংসতা ও বৈষম্যসহ ইভটিজিং এর  প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করছেন নারীরা।

জেলার আরেক নারী ইউএনও আফরোজা পারভীন মেঘনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তা। এর আগে আফরোজা পারভীন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় এসিল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর তিনি কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কিছুদিন ছিলেন। প্রায় ১১ মাস আগে  তিনি মেঘনা উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘নারীদের যে কোনও কাজ শুরুর আগে অনেক প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়। পরে তিনি যখন কাজটা সফলভাবে শেষ করেন তখন যে  মানুষগুলো বিপক্ষে ছিল তারাই বেশি সহযোগিতা করে। আমাদের দেশে সর্বস্তরের নারীরা তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে না। এখনও প্রায় অর্ধেকের বেশি নারী অবহেলিত। তারা এখনও পরিবারের কাছ থেকেই সমান অধিকার আদায় করতে পারেনি। নারীরা সমাজে এখনও নির্যাতনের শিকার। সমাজ ও পরিবারে সচেতনতা এলে দেশে তখন আর  নারী দিবস পালন করতে হবে না।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নারীবান্ধব প্রশাসন পরিচালনায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কুমিল্লায়ও নারীবান্ধব প্রশাসন পরিচালনায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। জেলায় ১৭টি উপজেলা মধ্যে কর্মরত ৩ নারী নির্বাহী কর্মকর্তা নিষ্ঠা ও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। নারী হওয়ার কারণে দায়িত্ব পালনে করতে গিয়ে তাদের কখনও সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। জেলা প্রশাসন তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে এবং আগামীতেও করবে।

আরও পড়ুন: বাগেরহাটে মেঘনা পরিবহনে ডাকাতি, আহত ৪