ঈদ দরজায় কড়া নাড়লেও মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসবের কোনও আয়োজন নেই কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে। থাকা-খাওয়ায় অসুবিধা ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণের অভাবে এই উৎসবের রং সেখানে অনেকটাই বিবর্ণ। সরেজমিনে ঘুরে ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
বুধবার (১৩ জুন) সকালে টেকনাফের লেদা মৌচনি রোহিঙ্গা শিবিরে দিলদার বেগমের সঙ্গে ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে কথা হলে তিনি আরও বলেন, ‘টাকার অভাবে ঈদে ছোট ছেলেটিকে জামা কিনে দিতে পারবো না। ঠিকমতো খেতেও দিতে পারবো না। এই অবস্থায় ঈদের দিন আর সাধারণ দিনের পার্থক্য করা যাবে না।’
উখিয়া মধুরছড়া রোহিঙ্গা শিবিরে এক অংশ বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানে ঘরে ভেতরে পানি থই থই করছে। ওইসময় জাহানার বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি গত বছর মিয়ানমারে থাকাকালীন ঈদের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘মিয়ানমারে কাঠের দোতলা বাড়িতে স্বামী নুর আলমের সঙ্গে গত বছর ঈদ উদযাপন করেছিলাম। ১০ কেজি গরুর মাংস রান্না করেছিলাম। আত্মীয়-স্বজনদের আপ্যায়ন করেছিলাম চালের গুড়া দিয়ে তৈরি রুটি ও গরুর মাংস দিয়ে। নতুন জামা পরে সেদিন সন্তানদের নিয়ে রিকশায় মংডু শহরে ঘুরেছিলাম। কিন্তু সেসব এখন শুধুই স্মৃতি। এবার ছেলেদের নতুন জামা দেওয়া দূরের কথা, ঠিকমতো খাবার দেওয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। তার ওপর গত চারদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এখন ভূমি ধসের আশঙ্কায় প্রাণের ভয় নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি।’
টেকনাফের মৌচনী তুলা বাগানের মাঝি দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘এই নতুন রোহিঙ্গা শিবিরে প্রায় চার শতাধিক ঘরে ২০ হাজার মানুষ রয়েছে। এসব মানুষের জন্য নেই কোনও ভালো খবার পানি, নেই কোনও টয়লেট। মাঝেমধ্যে ত্রাণ পাই আবার কখনও পাই না। আর মাত্র কয়েকদিন পর ঈদ। শিবিরের ছোট বাচ্চারা নতুন জামার জন্য কান্না করছে। এই বৃষ্টিতে এতোগুলো মানুষ এখন খাবার ও থাকার নিয়ে চিন্তিত রয়েছে। ফলে এবার রোহিঙ্গারা কষ্টের ঈদ কাটাবেন।’
জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারি বরাদ্দ এখন পর্যন্ত আসেনি। তবে বিভিন্ন এনজিওর পক্ষ থেকে তাদের জন্য ঈদ উপলক্ষে বিশেষ বরাদ্দ রয়েছে। সেগুলো তাদের কাছে বিতরণ করার কথা রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ফলে গত ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি শিবিরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
বহিরাগমন বিভাগ ও পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ১১ লাখ ১৭ হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন শেষ হয়েছে। তবে বর্তমানে রোহিঙ্গা নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে।