গত বছরের ২৫ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংস ঘটনার পর মুসলিম রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ১৬৫ পরিবারের ৫২৩ জন হিন্দু রোহিঙ্গা। এরমধ্যে ৬ পরিবারের ২৭ জন হিন্দু ফের মিয়ানমারের পালিয়ে গেলেও ৪৯৬ জন হিন্দু রোহিঙ্গাকে বিশেষ নিরাপত্তায় রাখে বাংলাদেশ সরকার। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এসব হিন্দু রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের দুর্গোৎসবেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিমা বিসর্জনের যাবতীয় সুযোগ সুবিধাসহ এই দুর্গোৎসবে তিনি ত্রাণের পাশাপাশি শুভেচ্ছা উপহারও পাঠিয়েছেন। এতদিন রাখাইনে ছোট পরিসরে হিন্দু রোহিঙ্গারা দুর্গাপূজা উদযাপন করলেও এবার বাংলাদেশে বৃহৎ পরিসরে দুর্গোৎসব পালনে সুযোগ পাওয়ায় আনন্দিত তারা।
উখিয়ার কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত সোনা বালা রুদ্র (৫৫) বলেন, আজ এক বছর দেড় মাস এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছি। এই পর্যন্ত আমার কোনও সমস্যা হয়নি। মিয়ানমার থেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসার পর থেকে চাল, ডাল, তেল ও নানা ত্রাণ সামগ্রী পেয়ে আসছি। সর্বশেষ পেলাম বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার। এতে আমি খুব আনন্দিত। কারণ, প্রতি বছর মিয়ানমারের ছোট পরিসরে আমরা দুর্গাপূজা পালন করে আসছিলাম। আজ নিজ জন্মভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আরও বৃহৎ আকারে দুর্গোৎসবে সামিল হতে পেরেছি। এজন্য বাংলাদেশে সরকারকে আর্শিবাদ জানাচ্ছি।
পূজা মণ্ডপে দায়িত্বরত নিরঞ্জন রুদ্র (৪৫) বলেন, ‘গত বছর ২৫ আগস্ট রাখাইনে সন্ত্রাসী হামলার পর আমরা বাংলাদেশে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসি। সেই বছর কোনও পূজা করতে পারিনি। কিন্তু এ বছর বাংলাদেশ সরকার আমাদের দুর্গোৎসব পালনের সুযোগ দেওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। আমরা ক্যাম্পের ভেতর থাকলেও যেন নিজ দেশে বসবাস করছি। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনে রাখার মতো। আমাদের কোনও ধরনের সমস্যা নেই।’।
কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘দুর্গোৎসবে হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। অন্যান্য ক্যম্পের তুলনায় হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কয়েক গুণ বেশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে পুলিশ মোতায়েন ছাড়াও মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং টিম রয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা, খাওয়া চিকিৎসা সবই দিয়ে আসছি। তারপরও পূজা উপলক্ষে এসব হিন্দু রোহিঙ্গাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা উপহার পাঠিয়েছেন। এতে নতুন শাড়ি, লুঙ্গি ও বাড়তি খাবারসহ নানা সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ মঙ্গলবার থেকে আমরা শুরু করেছি’।