আওয়ামী লীগ প্রচারে ব্যস্ত হলেও বিএনপিতে নেই নির্বাচনি আমেজ। বিএনপি বলছে, কেন্দ্র নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলে তারা শতভাগ প্রস্তুত আছে।
ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। দুর্নীতির মামলায় সাজা পাওয়ায় তার মনোনয়ন নেওয়া নিয়ে সমর্থকদের মাঝে সংশয় রয়েছে। তিনি ছাড়া গত কয়েক মাস ধরেই মনোনয়নের প্রত্যাশায় প্রচার চালাচ্ছেন ব্যবসায়ী এম ইসফাক আহসান। তবে বাবার নির্বাচনি এলাকা দখলে রাখতে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন মায়ার ছেলে সাজেদুল হক দিপু চৌধুরী। তবে দুর্নীতি মামলার থেকে খালাস পাওয়ায় জোরেশোরে প্রচার চালাচ্ছেন মায়া।
স্থানীয়রা জানান, মতলব উত্তর উপজেলা ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অধিকাংশ নেতাই মায়া চৌধুরীর লোক। গত ১০ বছর ধরে দলীয় পদের সুবিধা থেকে শুরু করে ঠিকাদারী ও ক্ষমতার সবধরনের সুবিধাই তারাই ভোগ করছেন। চৌধুরী পরিবারের অনুসারী হয়ে কয়েকজন নেতা শূন্য থেকে কোটিপতিও বনে গেছেন। তবে অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন সুবিধাবঞ্চিত। সব মিলে এখানে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে মায়া চৌধুরী। তবে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের তরুণ মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে নেমেছেন ব্যবসায়ী এম ইসফাক আহসান। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আছেন সাবেক এমপি রফিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নূরুল আমিন রুহুল এবং কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা আমিরুল ইসলাম খোকা, মায়ার ছেলে সাজেদুল হক দীপু চৌধুরী।
ইসফাক আহসান বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে মতলবের দু’ উপজেলায় বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম আমরা করছি। পারিবারিকভাবে প্রায় সাড়ে ৬০০ ঘর বানিয়ে দিয়েছে। এছাড়া আমি বিদেশ থেকে পড়াশোনা করার পর গ্রামের মানুষকে কীভাবে সহযোগিতা করে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা যায় সে বিষয়টি দেখছি।’
তিনি বলেন, ‘এখানে অনেকেই হয়তো মনোনয়ন চান। নেতাকর্মীদের মাঝেও একটু বিরোধ আছে। আমি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। আশাকরি, তৃণমূল নেতাকর্মীসহ সবাইকে নিয়ে আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবো।’
মনোনয়ন প্রাপ্তি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণ নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে। তাই আমি শতভাগ আশাবাদী মনোনয়ন পাবো। আমি মনোনয়ন পেলে মাদক এবং দুর্নীতিমুক্ত মতলব গড়ে তুলবো।’
মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, ‘মতলবের অধিকাংশ নেতাকর্মীই বর্তমান এমপি মায়া চৌধুরীর পক্ষে। মতলবের উন্নয়নে আমরা আগামী দিনে এমপি হিসেবে তাকেই দেখতে চাই।’
এ আসনে বিএনপির কর্মকাণ্ড চলছে ঢিমেতালে। এখানে দলটির সংগঠনিক অবস্থা অনেকটাই দুর্বল। বিশেষ করে তিনবারের সাবেক সংসদ নুরুল হুদার মৃত্যুতে বিএনপি অনেকটাই অভিভাবক শূন্যে হয়ে পড়ে। তবে বর্তমানে এখানে বিএনপির রাজনীতির হাল ধরেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নেতা ড. জালাল উদ্দিন আহমেদ। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আরও রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালি, তানভীর হুদা শুভ, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা মোস্তফা খান সফরী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয় এখনও আমাদের সামনে পরিষ্কার না। আমাদের নেত্রী জেলে। আমাদের নেতার নামে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা চাই, অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচনটি যেন আন্তর্জাতিক এবং গ্রহণযোগ্য হয় সেজন্য আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। নির্বাচনে যাওয়ার জন্য যে বাধাগুলো আছে এগুলোর সমাধানের পর বলা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের জন্য আমাদের সব সময় প্রস্তুতি আছে। কোন সিটে নির্বাচন করবো, কীভাবে করবো- এটি আমার কাছে এখন মুখ্য বিষয় না। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে দল এবং এলাকার জনগণ যদি চায় তাহলে চাঁদপুর-২ আসনে নির্বাচন করবো।’