উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ রেজাউল করিম ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে ভারত থেকে পালিয়ে আসা ৭৪ জন রোহিঙ্গাকে ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আরও ১৮ জন রোহিঙ্গা ভারত থেকে এসেছে। তাদের যাচাই-বাছাই শেষে নিশ্চিত হওয়া যাবে। শুনেছি অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশে করেছে, তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্রের তথ্যানুযায়ী, গত ১০ দিনে ১১১টি রোহিঙ্গা পরিবারের ৪৬৮ জন সদস্য কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রাবার বাগানের কাছের স্থাপিত ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। এরা সবাই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। নতুন আসা এসব সদস্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু নো-ম্যানস ল্যান্ড রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘তিন দিন আগে জোহর আহম্মদ ও তার স্ত্রীসহ এক পরিবারের ছয়জন রোহিঙ্গা ভারতের কাশ্মির থেকে পালিয়ে এসে আমার শিবিরে পৌঁছে। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। তবে বর্তমানে তারা শূন্যরেখায় আশ্রয় নিয়েছে।’
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, ‘সম্প্রতি ভারত সরকার সে দেশে আশ্রিত কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেয়। এই ভয়ে তারা সে দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসছে। তাদের কাছে ভারত ও ইউএনএইচসিআর-এর দেওয়া আইডি কার্ডও রয়েছে।’
আজিজ উল্লাহ বলেন, ‘ছোটবেলায় পরিবারের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে টেকনাফের শামলাপুর হাতকুলা গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখানে দীর্ঘ ১২ বছর শৈশব জীবন কাটিয়ে পরিবারের সঙ্গে পালিয়ে ভারতের কাশ্মিরের কেরানিটেলাই এলাকায় চলে যাই।’ সেখানে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গার বসতি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, ‘ভারতের কাশ্মিরে লোহার দোকানে দিনমজুরি করে সংসার চলতো। তবে অনেক সময় কাজের টাকা মিলতো না। ফলে সংসার চালাতে কষ্ট হতো। তাছাড়া সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, সেই ভয় সব সময় কাজ করছিল।’
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের ইনচাজ্ বদুর রহমান বলেন, ‘ভারতের কাশ্মির থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে এক যুবক আশ্রয় নেওয়ার খবর শুনেছি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’
টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, চারদিন আগে ভারত থেকে এক রোহিঙ্গা যুবক পালিয়ে এসে শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। তার কাছে সে দেশের ইউএনএইচসিআর কর্তৃক প্রদত্ত কার্ড রয়েছে।
তিনি বলেন, এই রোহিঙ্গা শিবিরে ২ হাজার ৬২৫ পরিবারে ১৩ হাজার ৭০ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ শিশু ও নারী।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, চলতি মাসে ভারত থেকে পালিয়ে আসা প্রায় অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা সদস্য পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। এদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। এসব রোহিঙ্গাকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়। পরে উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।