বান্দরবানে মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, খেয়াং, খুমি, লুসাই, চাক, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, মুরুং ও পাংখোয়া –এই ১১টি সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী বাস করে। এর মধ্যে মারমা, চাকমা ও ত্রিপুরা –এই তিন নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী ২০১৭ সাল থেকে নিজ মাতৃভাষার পাঠ্যবই পায়। কিন্তু বাকি ৮ নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা তা পায় না।
আনুম বম নামে বম নৃগোষ্ঠীর এক শিক্ষার্থী জানায়, ‘বিভিন্ন বিদ্যালয়ে মাতৃভাষার বই দেওয়া হলেও আমাদের মাতৃভাষার বই দেওয়া হচ্ছে না। আমরাও আমাদের নিজ মাতৃভাষায় বই চাই।’
খুমি নৃগোষ্ঠীর স্কুলপড়ুয়া শিশু হেনা খুমি বলে, ‘স্কুলে আমাদের বাংলা ভাষায় কথা বলতে হয়, বাংলা ভাষায় লেখা বই পড়তে হয়, এটা কঠিন। আমরা নিজের ভাষায় পড়তে চাই।’
এদিকে মারমা, চাকমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা নিজ নিজ মাতৃভাষার বই পায়। কিন্তু শিক্ষক না থাকায় বইগুলো কোনও কাজে আসে না। তাদের ভাষ্য, শুধু বই দিয়ে কী হবে।
এ তিন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর অনেকে জানান, শিক্ষক নেই। এ অবস্থায় বই দেওয়া মানে সরকারি অর্থের অপচয়। বইয়ের পাশাপাশি প্রশিক্ষিত শিক্ষকও দরকার।
উসাইনু মারমা নামে আরও এক শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমরা বই পেয়ে অনেক খুশি হয়েছি। এখন এগুলো পড়ানোর জন্য শিক্ষক প্রয়োজন।’
ফারুক পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমন বলেন, ‘আমাদের এখানে সবাই বম সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী। মারমা, চাকমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের বই পাওয়ার কথা জানিয়ে নিজ ভাষায় বই পাওয়ার জন্য আমাদের খুব বিরক্ত করে শিক্ষার্থীরা।’
আরেক প্রধান শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার এখানে প্রায় ৬টি নৃগোষ্ঠির শিক্ষার্থী আছে। এর মধ্যে অনেকে নিজ ভাষার পাঠ্যবই পায়, অনেকে পায় না। যারা পায় না তারা মন খারাপ করে। আবার যারা বই পাচ্ছে তারাও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবে তা পড়ার সুযোগ পায় না, ফেলে রাখে।’
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে মারমা, চাকমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষার বই দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ তিন নৃগোষ্ঠী থেকে নিজ নিজ মাতৃভাষায় বই লিখে আমাদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। আমরা তা পর্যালোচনা করে বই আকারে শিক্ষার্থীদের মাঝে দিচ্ছি। অন্য গোষ্ঠীগুলো তাদের মাতৃভাষায় বই লিখে এখনও আমাদের কাছে জমা দেয়নি। তবে ম্রো সম্প্রদায় তাদের নিজ ভাষায় লেখা বই আমাদের কাছে জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’