চট্টগ্রাম শহরে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন শাহিনুর

3fa0c5636de4df57f9cc0d45a21a53ae-5cbd7994da709

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় স্ত্রীর স্বীকৃতি চাওয়ায় স্বামী সালাহউদ্দিনের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহত তরুণী শাহিনুর আক্তার দুই বছর আগে গ্রামের বাড়ি রাউজান থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসেন। সেখানে তিনি তার ফুফুর বাড়িতে থেকে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। উপজেলার চেয়ারম্যান লায়ন এম সোহরাওয়ার্দী সিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
শাহিনুর রাউজানের নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডে সোনাগাজী চৌধুরী বাড়ির জাফর আহমেদের মেয়ে। তার বাবা দুই বিয়ে করেন। শাহিনুর জাফরের প্রথম স্ত্রীর মেয়ে। তার এক ভাইও রয়েছে। অন্যদিকে জাফরের দ্বিতীয় স্ত্রীর তিনটি ছেলে সন্তান আছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাওয়ার্দী সিকদার বলেন, ‘শাহিনুর চট্টগ্রামে শহরে যাওয়ার পর তেমন একটা বাড়িতে আসতো না। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে তার যোগাযোগও কম ছিল।’
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘মেয়েটির বাবা জাফর শ্রমিকের কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। দুপুরে আমি তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু জাফরকে পাওয়া যায়নি। জাফরকে পুলিশ বাসা থেকে ডেকে লক্ষ্মীপুর নিয়ে গেছে। তাকে পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যেতো। তবে বাড়ির অন্যরা তেমন কিছু জানাতে পারেননি।’
এম সোহরাওয়ার্দী সিকদার বলেন, ‘বাড়ির লোকজন জানিয়েছে ছোটবেলা থেকে শাহিনুর রাউজানের হলুদিয়া গ্রামে তার মামার বাড়িতে থাকতেন। দুই বছর আগে সে শহরে তার ফুফুর বাসায় যায়। কীভাবে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। শাহিনুরের বিয়ে হয়েছে কিনা এ ব্যাপারেও বাড়ির লোকজন কিছু জানাতে পারেননি।’
এর আগে, রবিবার (২১ এপ্রিল) লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরের পাটারিরহাট এলাকায় বিকালে স্বামীর স্বীকৃতি চাওয়ায় শাহিনুর আক্তারের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় সালাহউদ্দিন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাতে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে সোমবার (২২ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সালাহউদ্দিনের দুই ভাইকে আটক করেছে পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলো আবদুর রহমান বিশ্বাস ও আলাউদ্দিন।
দগ্ধ ওই তরুণী স্থানীয় সংবাদকর্মীদের জানিয়েছিলেন, দুই বছর আগে মোবাইল ফোনে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের পাটারিরহাট এলাকার মোহর আলীর ছেলে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কয়েক মাস পরে রাউজানে তাদের বিয়ে হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তিনি শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার কথা বললেও তাতে কোনও সাড়া দেননি সালাহউদ্দিন। পরে শুক্রবার রাতে তিনি একাই ছুটে আসেন কমলনগরের পাটারিরহাটে স্বামীর বাড়িতে। সেখানে এসে তিনি দেখেন সালাহউদ্দিনের স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ আলাদা সংসার রয়েছে। পরে স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবি করলে সালাহউদ্দিন তার সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। প্রত্যাখ্যাত হয়ে শাহিনুর দু’দিন ধরে ওই এলাকায় স্বীকৃতির দাবি আদায়ে জনে জনে ঘুরতে থাকেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সালাহউদ্দিন তাকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। পরে স্থানীয় চরফলকন ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. হাফিজ উল্যাহ ও গ্রাম পুলিশ আবু তাহের বিষয়টি সুরাহা করে দেবেন আশ্বাস দেন। এ অবস্থায় রবিবার বিকালে সালাহউদ্দিন বাড়ির পাশে একটি সয়াবিন ক্ষেতে শাহিনুরকে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেন।

আরও পড়ুন: 



মারা গেলেন লক্ষ্মীপুরে দগ্ধ শাহিনুর