এদিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। একই সঙ্গে ফেনীর সুধীমহলও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, সকালে জেলা পুলিশ প্রশাসনের ফেসবুক আইডিতে ‘ফেনীর সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার মহোদয়ের বিদায় সংবর্ধনা’ শিরোনামে একটি ব্যানারের ছবি পোস্ট করা হয়। ব্যানারটি মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এ নিয়ে জেলা পুলিশের ফেসবুক আইডিতে নিন্দার ঝড় উঠে।
ওই পোস্টের কমেন্টস বক্সে ঈমন নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘আফসোস, এ জন্যই দেশটার আজ এ অবস্থা। একজন কলুষিত অফিসার, যে কিনা একটি হত্যাকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করার দায়ে শাস্তি স্বরূপ ফেনী ছাড়ছেন, তাকেই দিচ্ছেন সংবর্ধনা। রবীন্দ্রনাথ ঠিকই বলেছেন, রেখেছো বাঙ্গালি, মানুষ করোনি।’
আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের একজন লিখেছেন, ‘ওরে সংবর্ধনা দিয়ে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।’
সামসুল আলম নামে জনৈক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘এখনও সুযোগ্য পুলিশ সুপার বলতেছে, এটা হাস্যকর ছাড়া কিছুই না। এই নিয়ে জেলা পুলিশের ওই আইডিতে ১৩৭ জন ব্যক্তি নানা মন্তব্য করেছেন।’
সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর শেখ মামুন বলেন, ‘যেখানে খোদ পুলিশ বিভাগ নুসরাত হত্যার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির দায়ে তাকে অভিযুক্ত করে শাস্তি দিয়েছে, সেখানে ফেনী পুলিশের এই সংবর্ধনা আয়োজন দেশবাসীকে কী বার্তা দিচ্ছে, তারা কি অভিযুক্তদের পক্ষে আছেন? আমরা সাধারণ মানুষের অযোগ্য আর অভিযুক্তরা, শাস্তি প্রাপ্তরা সুযোগ্য? ধিক সে সব মানুষদের যারা দেশ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যঙ্গ করছেন। আইনের লোক হয়েও আইনকে অসম্মান করছেন।’
গিয়াস উদ্দিন নামে ফেনীর এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘লজ্জা থাকলে বিদায়ী এসপি জাহাঙ্গীর সংবর্ধরা নিতেন না । তিনিতো রাতের আঁধারে পালিয়ে ফেনী ছাড়ার কথা ছিল। যারা তাকে সংবর্ধনা দিলো তারা এসপির দোসর।’
এ বিষয়ে ফেনীর নতুন এসপি কাজী মনিরুজ্জামানের বলেন, ফেনীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে প্রায় দু’বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি। এর মধ্যে পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পাই। রীতি হিসাবে জেলা পুলিশের উদ্যোগে স্যারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এটি তেমন কোনও বড় ঘটনা না। স্যারের সহকর্মী সুলভ আচরণে আমরা জেলা পুলিশ সন্তুষ্ট ও উনার কাছে কৃতজ্ঞ।’
এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) এএম জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে অভিযুক্ত এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইউসুফকে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে এবং এসআই (নিরস্ত্র) মো. ইকবাল আহমদকে খাগড়াছড়ি জেলায় সংযুক্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নিহত নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম শ্রেণির আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে যায় অধ্যক্ষের ভাগ্নি পপি। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বোরকা পরিহিত কয়েকজন। এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত।