নুসরাত হত্যা: পুলিশ কনস্টেবল রাসেলসহ ৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ

নুসরাতফেনী সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় নুসরাতের শরীরের আগুন নেভানোর সময় হাত ঝলসে যাওয়া পুলিশ কনস্টেবল মো. রাসেল হোসেনসহ পাঁচ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অপর সাক্ষীরা হলেন- সোনাগাজী মডেল থানার পিএসআই ডিএইচ এম জহির রায়হান, এএসআই আরিফুর রহমান ও স্থানীয় মো. আজাহারুল ইসলাম, মো. ওমর ফারুক।

সোমবার (২১ জুলাই) ১৮তম দিনের মতো ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে তারা সাক্ষ্য দেন। এর ফলে এখন পর্যন্ত এই মামলার ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।

এরআগে, সকাল সাড়ে ১১টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে মামলার ১৬ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী চার স্বাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সোনাগাজী মডেল থানার পুলিশ কনস্টেবল রাসেল সাক্ষ্য দেওয়ার সময় আদালতকে জানান, ভবনের সিঁড়িতে নুসরাতের চিৎকার শুনে প্রথমে আগুন নেভাতে এগিয়ে যান তিনি। এ সময় মামলার আসামি মাদ্রাসাছাত্র নুর উদ্দিন (২০) ও শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম (৪৫), উম্মে সুলতানা পপি ও কামরুন নাহার নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা করতে তার গায়ে আগুন দেয় বলে শুনেছি।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) এই মামলার ৩৮ নম্বর সাক্ষী ফজলুল করিম ৩৯ নম্বর সাক্ষী রাবেয়া আক্তার, ৪০ নম্বর মোয়াজ্জেম হোসেন ৪১ নম্বর সাক্ষী জাফর ইকবালের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহাম্মদ জানান, গত ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী ও নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।

তিনি আরও জানান, গত ২৯ মে আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে। ৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়। ১০ জুন মামলাটি আদালত আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত।

উল্লেখ্য, নুসরাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে তিনি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়। ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। এই ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে গত ৮ এপ্রিল আট জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।