চাঁদপুর মাছঘাটে জমেছে ইলিশ কেনাবেচা, কমছে দামও

চাঁদপুর মাছঘাটে আসা ইলিশ (ছবি– প্রতিনিধি)

চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটে এখনও প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় হাজার মণ ইলিশ আসছে। এতে জেলেরা খুশি। ব্যবসায়ীদের মুখেও হাসি অটুট রয়েছে। আর কর্মচঞ্চল রয়েছেন মৎস্যশ্রমিকেরা। কয়েকজন ইলিশ ব্যবসায়ী জানান, গত কিছুদিন ধরে বরিশাল, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপসহ সাগর-সংলগ্ন মেঘনার মোহনার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলেরা এসব ইলিশ সরাসরি নিয়ে আসছেন চাঁদপুর মাছঘাটে। এতে ১৫ দিন আগের তুলনায় এখন ইলিশের দামও অনেকটা কমছে।

চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ বাজারের আড়ৎদারেরা জানান, একমাস আগে এখানে দেড় থেকে দুইশ’ মণ ইলিশ কেনাবেচা হতো। তবে গত সপ্তাহ থেকে প্রতিদিনই দুই থেকে আড়াই হাজার মণ ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে। তবে গত দুইদিন তুলনামূলকভাবে ইলিশ কেনাবেচা কমেছে। আজ শনিবার (২৪ আগস্ট) বাজারে প্রায় এক হাজার মণ ইলিশ এসেছে।

চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ বাজারে শনিবার গিয়ে দেখা যায়, হাতিয়া, সন্দ্বীপসহ সাগর-সংলগ্ন মেঘনার মোহনার বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি ফিশিং বোট এসেছে। প্রতিটি বোটে ৫০-১০০ মণ ইলিশ রয়েছে। সড়ক পথেও পিকআপ ও ট্রাকভর্তি হয়ে ইলিশ আসছে এ বাজারে। এসব ইলিশ আনলোড করে আড়তের সামনে স্তুপ করে নিলামে তুলছেন ব্যবসায়ীরা। আড়তদাররা জানান, গত মাসের চেয়ে এখন ইলিশের দাম কম। একমাস আগে যে ইলিশ কেজিতে ১৫শ’ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা বিক্রি হচ্ছে একহাজার থেকে ১৩শ’ টাকায়।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়া জানান, ঘাটে যে মাছ আসছে, তার অধিকাংশই চাঁদপুরের বাইরের মাছ; লোকাল মাছ নেই। দক্ষিণাঞ্চলের শশীগঞ্জ, পাথরঘাটা, মহিপুর, লেতরা ও হাতিয়ার গভীর সাগরের মাছ আসছে। এসব ইলিশ এখানে থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে।

ফিশিং বোট থেকে মাছঘাটে আনা হচ্ছে ইলিশ (ছবি– প্রতিনিধি)

চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটের ব্যবসায়ী সাগর জানান, বর্তমানে চাঁদপুরের বাজারে ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ২৩-২৪ হাজার টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ৪২ হাজার টাকা, এককেজি ওজনের ইলিশের মণ ৪৮-৫০ হাজার টাকা। এককেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকায়। আর দুই কেজি ওজনের ইলিশের মণ একলাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ইলিশের বাড়ি খ্যাতি পাওয়ায় চাঁদপুরে মাছ কিনতে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন খুচরা ক্রেতারা। তারা দাবি করেন, ছোট ইলিশের দাম এখন কিছুটা কম। তবে বড় ইলিশের দাম এখনও বেশি।

সিলেট থেকে মাছ কিনতে আসা আবু জাহেদ বলেন, ‘ভেবেছিলাম চাঁদপুরে কম দামে ইলিশ কিনতে পারবো। কিন্তু তা আর হলো না। আমি দুই কেজি ওজনের দু’টি ইলিশ কিনেছি ৫ হাজার টাকা দিয়ে।’ তবে মাছ বিক্রেতা হাসান বলেন, ‘গত এক মাস আগেও এই সাইজের ইলিশের দাম ছিল ৮-১০ হাজার টাকা।’

কাগজের বক্সে ভরা হচ্ছে ইলিশ (ছবি– প্রতিনিধি)

ঢাকা থেকে আসা নাহিদ হাসান বলেন, ‘পুরো বাজার ঘুরে মাছের দাম জানলাম। সব সাইজের মাছের দামই এখানে বেশি চাইছেন ব্যবসায়ীরা। তারপরও এক কেজি সাইজের ১০টি মাছ কিনেছি ১১ হাজার টাকা দিয়ে। এখানে খারাপ-ভালো ইলিশ মাছ আছে। যেটি ভালো মাছ, সেগুলোর দাম একটু বেশি।’

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শবে বরাত সরকার বলেন, ‘বরিশাল, নোয়াখালীর হাতিয়া, লক্ষ্মীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতে মাছ ধরা পড়ছে। সেই মাছ এখানে কেনাবেচা হচ্ছে। আশা করছি, নদীগুলো নিষেধাজ্ঞার আগ পর্যন্ত মাছে ভরপুর থাকবে। দুই-তিন দিন পর মাছ আসার পরিমাণ আরও বাড়বে। তখন দামও আরও কমবে।’

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান বলেন, ‘জাটকা ও মা ইলিশ নিধনের কারণে বাংলাদেশে একসময় ইলিশ কমে যাচ্ছিল। সরকার জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় অভয়াশ্রম কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করে। প্রথম দিকে জেলেরা এ নিষেধাজ্ঞা মানছিল না। কিন্তু এখন তারা কিছুটা সচেতন হয়েছে। এসব পদক্ষেপে আজ ইলিশ ধরা পড়ছে বেশি।’