আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ প্রবণতার হার ক্রমেই বাড়ছে। কিছু রোহিঙ্গার উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে সাধারণ রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও আতঙ্কে থাকছেন। রাত হলেই একের পর এক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে ক্যাম্পের ভেতরে।
উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মোহাম্মদ ইউনুচ আরমান জানান, ভিনদেশে এসেও আমাদের এই হানাহানি ও অরাজকতা দুঃখজনক। আমরা কবে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবো, সেই চিন্তা না করে একশ্রেণির রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তুচ্ছ ঘটনায় মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করছে না। আমরা ক্যাম্পে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। যাতে অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
উখিয়ার কুতুপালং মধুরছড়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘কিছু রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা নতুন আসা আনরেজিস্টার্ড রোহিঙ্গাদের সহ্য করতে পারে না। তারা কথায় কথায় নতুন আসা রোহিঙ্গাদের ওপর হাত তুলছে। এতে করে অপরাধের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে এবং পুরো ক্যাম্পে অস্থিরতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
কক্সবাজার জেলা পুলিশ জানিয়েছে, গত দুই বছরে ৪৭১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি হয়েছে ১০৮৮জন। এরমধ্যে হত্যা মামলা ৪৩টি, অস্ত্র মামলা ৩৬টি, মাদক মামলা ২০৮টি, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে ৩১টি, ফরেনার্স অ্যাক্টে ৩৭টি, অপহরণ মামলা ১৫টি, বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২১টি, পুলিশের ওপর হামলায় ১টি, ডাকাতি ও ডাকাতির চেষ্টার অভিযোগে ৯টি, মানবপাচার মামলা ২৪টি ও অন্যান্য অভিযোগে ৪৬টি মামলা হয়েছে। গত ২০১৭ থেকে চলতি বছরের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্যাম্পের ভেতরে নেতৃত্বের আধিপত্য, গোষ্ঠীগত, পারিবারিক, নিজ দেশে বিরোধের জেরসহ নানা কারণে খুনের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে ক্যাম্পের মধ্যে যারা মাঝি ও হেড মাঝি রয়েছে, তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল একটু বেশি।’
উল্লেখ্য, রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাদের নির্যাতন হতে জীবন বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেন বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। মানবিক কারণে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয়ের পাশাপাশি সার্বিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি এনজিওর পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার তাদের খাদ্য, অস্থায়ী বাসস্থান, চিকিৎসা, বস্ত্র, লেখাপড়া, বিনোদনসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিরাপদে রাখাইনে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। তাদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার হচ্ছে।