লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গোমতীর চরের জমি!

গোমতী নদীর চরের জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেছেন অনেকেকুমিল্লার বুক চিরে বয়ে যাওয়া গোমতী নদীর সৌন্দর্য এখন আর নেই। নদীর চর কেটে মাটি-বালু উত্তোলন, নদী রক্ষা বাঁধে দোকান-পাট নির্মাণ এবং চর দখল করে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করায় সৌন্দর্য হারিয়েছে নদী। দখলদারিত্বের পাশাপাশি প্রভাবশালীরা এখন চরের জমি বিক্রি করছেন। প্রতি শতক জমি এক লাখ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। এতে প্রভাবশালীরা লাভবান হলেও জমি কিনে বসতি শুরু করা মানুষগুলো রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। সরকার চাইলে ওইসব জমি ছেড়ে চলে যেতে হবে তাদের।   

সরেজমিনে দেখা যায়, কুমিল্লার আলেখারচর আমতলী ব্রিজ থেকে টিক্কারচর ব্রিজ পর্যন্ত নদীর দুই পাশে রয়েছে অসংখ্য কাঁচা-পাকা বাড়ি। বাঁধের ওপরের জায়গা দখল করে দোকানপাট নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে চর ভরাট করে দোকান নির্মাণ করেছেন ব্যবসা করছেন।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই কর্মকর্তা জানান, নদীর বাঁধের ভেতরে সরকারি সম্পত্তি দখল করে ঘর-বাড়ি এবং দোকানপাট নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি তালিকা করেছে। রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গোমতী নদী রক্ষার বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ৩১৭টি অবৈধ দখলদারের নাম জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

গোমতী নদীর চরের জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেছেন অনেকেখোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণের সময় সরকার যাদের কাছ থেকে সম্পত্তি কিনেছিল তারা সরকারের কাছে সম্পত্তি বিক্রি করলেও দখলে ছিলেন। বর্তমানে ওই দখলদাররা চরের প্রতি শতক জমি লাখ টাকায় বিক্রি করছেন।

রফিকুল ইসলাম নামে চরের এক বাসিন্দা জানান, এক বছর আগে শহরতলী চাঁনপুর এলাকার রাজা মিয়া নামে এক ব্যক্তি থেকে প্রতি শতক এক লাখ টাকা দরে আড়াই শতক জমি কিনেছিলেন। রফিকুলসহ আরও ৬ পরিবারের কাছে রাজা মিয়া স্ট্যাম্পের মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করেছেন।

তিনি জানান, টাকা নেওয়ার সময় তাদেরকে স্ট্যাম্প দিয়েছেন রাজা মিয়া। তাতে লেখা আছে, এই সম্পত্তি কেউ দাবি করতে আসবে না। তবে সরকার যখন চাইবে তখন এই সম্পত্তি রেখে চলে যেতে হবে।

পাঁচথুবী ইউনিয়নের একজনের কাছ থেকে মিজানুর রহমান দোকান করতে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। তিনি জানান, বাঁধের সঙ্গে হওয়ায় প্রতি শতক জমি দেড় লাখ টাকা করে নিয়েছে।

গোমতী নদীর বাঁধ দখল করে দোকান নির্মাণকুমিল্লা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল লতিফ বলেন, ‘গোমতী নদীর বাঁধের ভেতরে দখল হওয়া সম্পত্তি উচ্ছেদের জন্য আমরা তালিকা করেছি। ৩১৭টি স্থাপনা ও বসতি রয়েছে সেখানে। এসব স্থাপনা ও বসতির কারণে নদীর সৌন্দর্য দিন দিন ম্লান হচ্ছে। এখনই উচ্ছেদ না করলে কয়েক বছর পর তারা নদী রক্ষা বাঁধের জন্য হুমকি হয়ে যাবে। আমরা তালিকাটি জেলা প্রশাসকের বরাবর দিয়েছি। খুব শিগগিরই আমরা উচ্ছেদ অভিযানে নামবো।’

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বলেন, ‘গোমতী নদীর বাঁধ ও চরের সরকারি সম্পত্তির দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি তালিকা দিয়েছে আমাদেরকে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যখনই চায় উচ্ছেদে যেতে পারে আমরা। তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।’