টাকার জন্যই ডা. শাহ আলমগীরকে খুন করে ছিনতাইকারীরা

র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে নগরীতে ফেরার পথে ছিনতাইকারীরাশিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহ আলমগীরকে হত্যা করে কুমিরা এলাকায় সড়কের পাশে লাশ ফেলে যায় বলে জানিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক কাজী তারেক আজিজ বলেন, ‘শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ডা. শাহ আলমগীরের লাশ উদ্ধারের পর র‌্যাব এ ঘটনার ছায়াতদন্তে নামে। আমরা জানতে পারি, শাহ আলমগীর ওই দিন একটি লেগুনায় করে চট্টগ্রাম ফিরছিলেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ওই লেগুনার নাম ছিল বীর মনসুর পরিবহন। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ওই লেগুনার ড্রাইভার ওমর ফারুককে (১৯)চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে গ্রেফতার করি। তার কাছ থেকেই আমরা জানতে পারি, ডা. শাহ আলমগীরকে ছিনতাইকারীরা হত্যা করেছে।’

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক কাজী তারেক আজিজ। চট্টগ্রাম নগরীর চাঁন্দগাও এলাকায় র‌্যাব-৭ এর ক্যাম্পে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

কাজী তারেক আজিজ বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে লেগুনা চালক ওমর ফারুক আমাদের জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে মোট পাঁচ জন জড়িত। সীতাকুণ্ড থেকে ডা. শাহ আলম যখন লেগুনায় ওঠেন, তখন যাত্রীবেশে আগে থেকে দুইজন বসা ছিল। কিছুদূর যাওয়ার পর আরও দুইজন গাড়িতে ওঠে। তারা ডা. শাহ আলমগীরকে তার কাছে থাকা টাকাপয়সা যা আছে তা দিয়ে দিতে বলে। টাকাপয়সা না দিয়ে শাহ আলমগীর এর প্রতিবাদ করলে তারা তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। খুনের পর লাশ যাতে শনাক্ত করা না যায়, সেজন্য তারা শাহ আলমগীরের মুখ বিকৃত করে দেয়। এরপর তার লাশ কুমিরা সড়কের পাশে ফেলে দিয়ে তারা সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডের দিকে ফিরে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাড়বকুণ্ড যাওয়ার পর ড্রাইভার তার বাসা থেকে একটি বালতি নেয়। পরে ওই গাড়িটি বাড়বকুণ্ডের সাগর পাড়ে নিয়ে লেগুনায় থাকা রক্ত ধুয়ে ফেলে সে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটিও তারা ধুয়ে ফেলে। এরপরএকজন আসামির কাছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিরেখে দেয়। ওই আসামি এখনও পলাতক রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর আসামিদের আমরা গ্রেফতার করার চেষ্টা করছি। আশা করছি, শিগগির আপনাদের সামনে তাদেরহাজির করতে পারবো।’

এই নেগুনায় হত্যা করা হয় ডা. শাহ আলমগীরকে

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় মহানগর আদালতের বিচারক শিপলু কুমার দে’র কাছে গ্রেফতার আসামি ওমর ফারুকস্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলেও জানান কাজী তারেক আজিজ। তিনি বলেন, ‘আজ বিকালে ওমর ফারুক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে ওমর ফারুক এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর চার জনের নাম বলেছে। তদন্তের স্বার্থে আমরা নামগুলো বলছি না। শিগগির আমরা তাদেরগ্রেফতার করবো।’

তারেক আজিজ বলেন, ‘আসামিরা ওই দিন এই লেগুনার ব্যবহার করে আরও কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছিল। ওই সব যাত্রীরা সব কিছু দিয়ে দেওয়ায় তাদেরআঘাত করা হয়নি। ডা. শাহ আলমগীর তার কাছে টাকাপয়সা দিতে চাননি বলে তারা তাকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে। খুন করার সময় তারা জানতো না, তিনি ডাক্তার। লাশ উদ্ধারের পর খবর প্রকাশিত হলে তারা জানতে পারে, তিনি ডাক্তার ছিলেন।’

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকালে সীতাকুণ্ডে বাড়বকুণ্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ থেকে একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের মুখ বিকৃত হওয়ায় প্রথমে তা শনাক্ত করা যায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ লাশ ডা. শাহ আলমগীরের। তিনি সৌদি আরবের একটি হাসপাতালের শিশুরোগ বিষয়ের ডাক্তার ছিলেন। দুই বছর আগে দেশে ফিরে তিনি নিজ এলাকার মানুষের সেবায় সীতাকুণ্ডে একটি শিশু হাসপাতাল গড়ে তুলেন। নগরীর চাঁন্দগাওয়ের বাসা থেকে সীতাকুণ্ডে গিয়ে প্রতিদিন ওই হাসপাতালে সময় দিতেন তিনি।