জেএসএস নেতারা বলছেন, শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো সেখানে নতুন নতুন আঞ্চলিক সংগঠন তৈরি করে তাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। যার কারণে তাদের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। এমন পরিস্থিতিতে বান্দরবানে শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তি পালন সম্ভব নয় বলে জানান নেতারা।
চলতি বছরের ২২ জুলাই আওয়ামী লীগ নেতা মংমং থোয়াই মারমাকে গুলি করে হত্যা করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। এর আগে, ২২ মে বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বান্দরবান পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ও পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চথোয়াইমং মারমাকে বালাঘাটার চড়ুইপাড়া এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ২৫ মে দুপুরে জর্ডান পাড়া থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এছাড়াও একই বছরের ৭ মে সন্ত্রাসীরা জনসংহতি সমিতির কর্মী বিনয় তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অপহরণ করা হয় ফোলাধন তংচঙ্গা নামের অপর কর্মীকে। এখনও তার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। গত ৯ মে সন্ত্রাসীরা জনসংহতি সমিতির সমর্থক জয় মনি তঞ্চঙ্গ্যাকে গুলি করে হত্যা করে। ১৯ মে বান্দরবানের রাজবিলায় আওয়ামী লীগের সমর্থক ক্য চিং থোয়াই মারমাকে (২৭) অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা।
স্থানীয়দের মতে, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পরও পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসেনি বরং একের পর এক নিরীহ পাহাড়ি বাঙালিকে হত্যা করা হচ্ছে নানা অজুহাতে। রাতে পাহাড়ি পল্লিগুলোতে কোনও পুরুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে না। অনেকে প্রাণ বাঁচাতে নিজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ে।
বান্দরবানের কয়েকটি পাড়ার পাড়া প্রধান (কারবারি) বলেন, সম্প্রতি বান্দরবানের বিভিন্ন দুর্গম পাড়ায় জেএসএস ছাড়াও ইউপিডিএফ ও মগ পার্টি নামে দুটি আঞ্চলিক সংগঠন তৈরি হয়েছে। এখন কেউ কোনও দলকে সমর্থন করলে অন্য দলের লোকজনরা এসে তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করছে। আবার সংগঠনে যোগ না দিলে সবগুলো সংগঠন থেকে দলে যোগ দিতে চাপ দেয়। ধরে নিয়ে হত্যা করে, জরিমানা দিতে হয়। তাদের এসব কর্মকাণ্ডে আমরা দিশেহারা। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। আমাদের গ্রামগুলো এখন প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জেএসএস নেতারা জানায়, সরকার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে এর পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। এর মূলধারাগুলো বাদ পড়েছে। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার পর আমাদের ধারণা ছিল, পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে এর পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু ধাপে ধাপে কয়েকবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও এর বাস্তবায়ন দূরের কথা উল্টো পাহাড়ে নতুন নতুন আঞ্চলিক সংগঠন তৈরি করে তাদের মাধ্যমে পাহাড়ে আমাদের নেতাকর্মীকে হত্য করা হচ্ছে। এসব সংগঠনকে উল্টো আমাদের চাঁদা দিতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় আমাদের নিজেদের টিকে থাকা কষ্ট হয়ে উঠেছে। জীবনেরও কোনও নিরাপত্তা নেই আমাদের। এমন পরিস্থিতিতে বান্দরবানে শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তি পালন সম্ভব নয় বলে জানান নেতারা।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমরা যদি বলি, আমাদের নিরাপত্তার অভাব তাহলে নিরাপত্তার নামে আমাদের চারপাশে পুলিশ, সেনাবাহিনী দিয়ে ঘিরে রাখবে। তাই নিরাপত্তা নেই এ কথাও বলতে পারছি না। যারা বর্ষপূর্তিতে অংশ নেবে তারা জীবন নিয়ে ফিরে যেতে পারবে এমন নিশ্চয়তাও আমরা দিতে পারছি না। এমন পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তি পালন সম্ভব নয়।’
এদিকে বাঙালি সংগঠনের নেতারা বলেন, শান্তিচুক্তি একটি কালো চুক্তি। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে এটি করা হয়েছিল। কিন্তু পাহাড়ে শান্তি দূরে থাক, এখনও পাহাড়ের মানুষ নিরাপদে ঘুরে বেড়াতে পারে না। পাহাড়ে যেতে পারে না। কোনও কাজ করতে গেলে মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয় পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনকে।
তারা আরও বলেন, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পরও একদিনের জন্য হলেও পাহাড়ে হত্যা, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ হয়নি বরং বেড়ে চলছে। তাদের দাবি, এ চুক্তি বাতিল করে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করে শান্তি ফিরিয়ে আনার।
এ বিষয়ে বান্দরবানের পার্বত্য নাগরিক পরিষদের সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, ‘সরকার জেএসএস’র সঙ্গে যে চুক্তি করেছে তাতে শান্তি আসেনি বরং আগের তুলনায় হত্যা, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই এ কালো চুক্তি বাতিল করে পয়েন্টে পয়েন্টে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনা হোক।’
এ বিষয়ে পার্বত্য বাঙালি পরিষদের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, ‘শান্তিচুক্তির পরও পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি থামছে না। একেরর পর এক বাঙালিকে তারা হত্যা করছে।’ এমন অবস্থায় চুক্তি বাতিল পূর্বক সেনা ক্যাম্প স্থাপন করে নিরাপত্তা বাড়ানোর কোনও বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন।