দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। এই দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দাদের বেশিরভাগ মানুষ যুগ যুগ ধরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সীমানা চিহ্নিতকরণে বয়া থাকা জরুরি হলেও তা সেন্টমার্টিন এলাকায় নেই। এ কারণে সম্প্রতি ইঞ্জিন বিকল হয়ে মিয়ানমার জলসীমায় ঢুকে পড়ে বাংলাদেশি একটি মাছধরার ট্রলার। মিয়ানমান নৌবাহিনী ওই ট্রালারের ১৭ বাংলাদেশি জেলেকে আটক করে। পরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মাধ্যমে এসব জেলেদের ফেরত পাঠায় মিয়ানমার। তবে আটক অনেক জেলে এখনও মিয়ানমারের কারাগারে বন্দি আছেন।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একদিকে বৈরী আবহাওয়া, অন্যদিকে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ধাওয়ার ভয় মাথায় রেখেই কাজ করতে হচ্ছে জেলেদের।
সাগরা পাড়ে ছেঁড়া জাল ঠিক করছিলেন আবুল কালাম। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমানায় সাগরের অথৈ পানিতে কোনও ধরনের চিহ্নিতকরণ বয়া নেই। এ কারণে আমাদের অনেক জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও নৌ-বাহিনী। এদের অনেককে বাংলাদেশ সরকার ফিরিয়ে আনলেও অনেকেই মিয়ানমারের কারাগারে বন্দি আছেন।’
আরেক জেলে আলী আকবর মহাজন বলেন, ‘অনেক সময় বৈরী আবহাওয়া জেলেদের ভাসিয়ে নিয়ে যায় মিয়ানমারের জলসীমায়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বাতাসের গতিতে পথ ভুলে মিয়ানমারের জলসীমায় চলে যায়। অপরদিকে, মিয়ানমারের অনেক জেলে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করছে। এতে করে আমাদের মৎস্য সম্পদ লুট হচ্ছে।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম ওয়াসিম মকছুদ বলেন, ‘সাগরে যেসব জেলেরা মাছ শিকার করেন, তাদের অধিকাংশ জানেন না কোনটি কোন দেশের জলসীমা। মাছ ধরতে ধরতে এক সময় ভুলেই চলে যান অন্য দেশের জলসীমায়। এই সমস্যা শুধু আমাদের দেশে নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর জেলেদের মধ্যেও রয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ জলসীমায় এখনও আধুনিক বাতি বয়া স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তাই, জেলেদের নিজ থেকেই সচেতন হতে হবে।’
শুধু জেলেদের নয়, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত বড় বড় জাহাজ ও ট্রলি থেকে শুরু করে সব ধরনের নৌ-যানকে বয়া না থাকায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। একইভাবে পড়তে হচ্ছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলরত পর্যটকবাহী জাহাজ গুলোকেও। তাই, দ্রুত বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমা চিহ্নিত করে বয়া স্থাপনের দাবি সেন্টমার্টিন দ্বীপে বসবাসরত জেলেদের।