চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের মোহাম্মদ নাসির এক সময় তামাকের চাষ করতেন। এখন তিনি গোলাপ চাষ করছেন। তিনি বলেন, ‘আগে আমি তামাক চাষ করতাম। এখন গোলাপ চাষ করছি। লাভজনক হওয়ায় গোলাপ চাষই ভালো লাগে। তামাকে ৬ মাস লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু একবার গোলাপের চারা লাগালে ৩-৪ বছর সেই গাছের ফুল বিক্রি করে লাভ করা যায়।’
ফুল চাষি ফজলুল কবির বলেন, ‘তামাকের কারণে পরিবেশের ক্ষতি যেমন হয় তেমনি মানুষ অসুস্থও হয়ে পড়ে। তাছাড়া তামাক চুল্লিতে বনের কাঠ পোড়ানো হয়। ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের, ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ও।’
তামাক চাষি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কোম্পানির পক্ষ থেকে যতগুলো তামাক কেনার কথা ছিল তা নাকি শেষ হয়ে গেছে। এতে আমরা লোকসানে পড়েছি। অবিক্রিত তামাক নদীতে ফেলে দিতে হয়েছে। এছাড়া ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না পেরে অনেকে দেশান্তরি হয়েছেন।’
গোলাপ চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘তামাকের চেয়ে গোলাপ চাষ অনেক ভালো ও লাভজনক। একজনে যদি না কেনে আরেকজনের কাছে আমরা ফুল বিক্রি করতে পারি। তামাক কিন্তু আমরা বিক্রি করতে পারি না।’
সরকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো তামাকের বিকল্প চাষে কৃষকদের উদ্বুব্ধ করতে শুরু করেছে নানা কার্যক্রম ও পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে এনজিওগুলো।
এ ব্যাপারে এনজিও ইপসার প্রধান নিবার্হী আরিফুর রহমান বলেন, ‘সব তামাক চাষিকে আমরা উদ্ধুব্ধ করবো যাতে করে তারা তামাকের বিকল্প ফসলগুলো চাষ করে। এছাড়া আমাদের টার্গেট হচ্ছে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া।’
এ ব্যাপারে কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, ‘কক্সবাজারের যে অঞ্চলগুলোয় বর্তমানে ফুলের চাষ হচ্ছে সেখানেই কিন্তু তামাকের জমি ছিল। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের উদ্বুব্ধ করছি তারা যেন তামাকের বদলে লাভজনক ফুল কিংবা সবজি চাষ করেন। এতে আয়ও হবে, পরিবেশও বাঁচানো যাবে।’
তিনি আরও বলেন, তামাকের চুল্লি থেকে পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতির বিষয়টি চাষিরা বুঝতে শুরু করেছে। এভাবে চললে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে কক্সবাজার থেকে সম্পূর্ণরূপে তামাক চাষ নির্মূল করতে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কৃষি বিভাগ।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়ার বরইলী ইউনিয়নে তামাকের পরিবর্তে চলতি বছর ৭৬ হেক্টর জমিতে গোলাপ, ২৮ হেক্টরে গ্লাডিওলাস এবং আরও ১৬ হেক্টরসহ মোট ১২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করছেন পাঁচ শতাধিক চাষি।
চাষিরা জানান, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় গোলাপ প্রতি দাম মানভেদে পাইকারি তিন-চার টাকা ও গ্লাডিওলাসের স্টিক ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।