রোহিঙ্গা শিবিরে কোরবানি হবে তিন হাজার গরু

রোহিঙ্গা ক্যাম্পকরোনাকালে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে তিন হাজার গরু কোরবানি করা হবে। বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) বিকালে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক।

তিনি জানান, করোনার প্রভাবে অন্য বছরের তুলানায় এবার কোরবানি পশুর সংগ্রহ কম। ঈদুল আজহা উপলক্ষে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কাছ থেকে তিন হাজার ২শ' ৩০টি গরু পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কিছু ছাগলও রয়েছে। এসব কোরবানির পশু উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি শরণার্থী শিবিরে ভাগ করা হবে। তবে আরও কিছু গরু পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এসব কোরবানি পশু যেখানে যতটা দরকার ততটা হিসাব করে পাঠানো হবে। এরপর কোরবানির গাইড লাইন অনুসরণ করে স্ব স্ব ক্যাম্পের সিআইসি’র তত্ত্বাবধানে মাংস বন্টন করা হবে। যদি ৯ লাখ রোহিঙ্গাও ধরি, তাহলে তাদের জন্য পাচঁ হাজার কোরবানি পশু দরকার। এমনও হয় ঈদের পরে গরু পাওয়া যায়। আমাদের চেষ্টা থাকবে, যেন সব রোহিঙ্গাই মাংস পান।’

আগামী শনিবার ঈদুল আজহা পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে, রোহিঙ্গাদের প্রায় সবাই মুসলিম হওয়ায় তারা ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার কিছু শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গারা নিজেদের টাকায় ভাগাভাগি করে গরু কিনেছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

টেকনাফের ২৫, ২৬ ও ২৭ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান জাফর আলম বলেন, ‘ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানি পশু বিষয়ে সিআইসি’র কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এখন পর্যন্ত তার দায়িত্বে থাকা কোনও ক্যাম্পে কোরবানির পশু পৌঁছায়নি।’ 

টেকনাফের লেদা শরণার্থী শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘আমার ক্যাম্পে আড়াই হাজার পরিবারের সাড়ে ১৮ মানুষের বসতি। এসব মানুষ গত বছর কোরবানির ঈদে গরুর মাংস পাননি।’ অন্তত এবার তার ক্যাম্পের লোকজন ঈদে গরুর মাংস পাবে বলে আশা করেন তিনি। 

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘অন্য বছরের ন্যায় এবারও রোহিঙ্গা শিবিরের কোরবানির পশু বন্টন নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া এসব কোরবানি পশু উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে ভাগ করে দেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ফেলে এসব কোরবানি পশু ক্যাম্পে পৌঁছানো হবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট কোরবানি ঈদের মাত্র কয়েকদিন আগে রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নিপীড়ন শুরু করে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। পুরনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।