কুমিল্লায় টাকার বিনিময়ে হাজতবাসের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

বাঁয়ে আসল আসামি আনোয়ার হোসেন, ডানে নকল আসামি মো. আবু হানিফকুমিল্লায় মাদক মামলায় আসামি আনোয়ার হোসেনের পরিবর্তে টাকার বিনিময়ে আবু হানিফের হাজতবাসের ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুল ইসলাম সরদারকে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর।

গত সোমবার (১০ আগস্ট) জামিন শুনানিকালে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলে মামলার জামিন শুনানি মূলতবি করা হয়। এর আগে গত বছরের ৩০ জুলাই ভোরে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আড়াইওরা এলাকা থেকে ২ কেজি গাঁজা উদ্ধারের ঘটনায় দুই জনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই নন্দন চন্দ্র সরকার।

এ মামলায় হেলাল মিয়া নামে এক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হলেও পলাতক ছিলেন জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের গঙ্গানগর গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন।





মামলাটির তদন্ত শেষে উভয়কে অভিযুক্ত করে ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সহিদুল ইসলাম। চলতি বছরের ২৬ জুলাই এ মামলায় আনোয়ার হোসেন পরিচয়ে আবু হানিফ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠান।
এদিকে জেলে যাওয়া যে ব্যক্তি আনোয়ার হোসেন পরিচয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন প্রকৃতপক্ষে তিনি জেলার বরুড়া উপজেলার বড় হাঙ্গিনা গ্রামের মৃত মনু মিয়ার ছেলে মো. আবু হানিফ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবু হানিফ গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ২৪ কেজি গাঁজা পাচারকালে বিজিবি’র হাতে গ্রেফতার হন। এ ঘটনায় ৬০ বিজিবি’র অধীন সালদানদী বিওপি’র নায়েক মো. খোরশেদ আলম বাদী হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় ২৩ ডিসেম্বর কারাগারে যান আবু হানিফ। পরে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্ত হন। এ মামলায় আবু হানিফের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাসুদ রানা।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ জানান, বিষয়টি নজরে আসার পর জানতে পারি দুটি মামলায় একই ব্যক্তি কারাগারে এসেছে। রেজিস্ট্রারে আনোয়ার হোসেনের বয়স ৪২ এবং আবু হানিফের বয়স ২২ বছর। নাম এবং বয়সে পার্থক্য থাকলেও ছবিতে মিল রয়েছে। পরে কারাগারে থাকা আসামির সঙ্গে কথা বলে সত্যতা পাওয়া যায়। বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং সংশ্লিষ্ট আদালতকে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আসামি আবু হানিফের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, ৫০ হাজার টাকা চুক্তির বিনিময়ে সে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে আনোয়ার হোসেন পরিচয়ে কারাগারে এসেছে। চুক্তি অনুয়ায়ী তাকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে এবং ৪০ হাজার টাকা পরে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম জানান, মূল আসামি আনোয়ার। কিন্তু তার পরিবর্তে আদালতে স্বেচ্ছায় হাজির হয়েছে আবু হানিফ। এরপর নিয়মানুযায়ী মামলার শুনানি শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। প্রলোভন দেখিয়ে বা অন্য কোনওভাবে ম্যানেজ করে আবু হানিফকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং প্রতারণার শামিল।
জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর জানান, কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করার পর ঘটনাটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যেই তাদেরকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ শাহরিয়ার মিয়াজী ও কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ।