এবারের পূজা আয়োজন সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের গগন সাহাবাড়ী রোড সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিষ কুমার সাহা জানান, মানুষের মনে দুর্গা মায়ের আগমনকে কেন্দ্র করে আনন্দ আছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মরণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে এবারে পূজার আয়োজন সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। গত বছরের মতো এবার পূজার প্যান্ডেল আকারে ছোট করা হয়েছে। প্রতিমার আকার ছোট করা হয়েছে। আলোকসজ্জা অনেকটা সাদামাটা ভাবে করা হচ্ছে। সাউন্ড সিস্টেম এবার থাকবে না বলেই চলে। অর্থাৎ সব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এবার কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেটি পূজা কমিটির সদস্যদের জানানো হয়েছে। নির্দেশনা মানার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে।’
শহরের দাস পাড়া সার্বজনীন পূজা কমিটির আয়োজক সত্যরঞ্জন দাস জানান, করোনার কারণে প্রথমে লোকজন এবার পূজো করবে কিনা এ নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন। পরে এলাকার লোকজন একাধিক সভায় মিলিত হয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে পূজা করার সিদ্ধান্ত নেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সোমেশ রঞ্জন রায় সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পূজার সংখ্যা প্রায় ২৪টি কমেছে। গত বছর ৫৭৯টি মণ্ডপে পূজা হয়েছিল। এ বছর ৫৫২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে পৌরসভাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় ৬৭টি, নাসিরনগরে ১৪৫টি, সরাইলে ৪৭টি, কসবায় ৫০টি, আখাউড়ায় ১৯টি, আশুগঞ্জে ১২টি, বিজয়নগরে ৫২টি, নবীনগরে ১১৯টি এবং বাঞ্ছারামপুরে ৪১টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের প্রতিমা শিল্পী ঝন্টু পাল, সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের হিমাংশু পাল রবীন্দ্র পাল জানান, করোনার প্রভাবে পূজার সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাদের তৈরি করা অবিক্রিত প্রতিমাগুলো রয়ে যাবে। আগে থেকে অর্ডার করা প্রতিটি দুর্গা প্রতিমাকে পূর্ণাঙ্গ শৈল্পিক রূপ দেওয়ার জন্যে তারা শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জার কাজ করছেন। তার পরও পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় খুশি প্রতিমা শিল্পিরা।
সনাতনী বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী, এ বছর ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়া তিথি অনুষ্ঠিত হয়। এরই মধ্য দিয়ে পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের শুরু হয়। এবারের মল মাসের কারণে পূজার আনুষ্ঠানিকতা এক মাস পিছিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে এ বছর দুটি অমাবস্যা একমাসে পড়ছে। আর তার জন্যই পূজা একমাস পিছিয়ে আশ্বিনের জায়গায় কার্তিকে হচ্ছে। প্রতি উনিশ বছর পরপর এই মল মাস আসে। তিথি নক্ষত্রের সূক্ষ্ম হিসেব মেলাতে গিয়েই এটা ঘটে থাকে। সনাতন ধর্মের মতে মল মাসে কোনও পূজা-অর্চনা করা যায় না। সব পূজা-অর্চনা হয় সূর্য ও চন্দ্রের তিথি অনুযায়ী। তাই দুটি অমাবস্যা তিথির কারণে মল মাস তৈরি হয়।
পুরোহিতেরা আরও জানান, সপ্তমী থেকে নবমী তিথিতে তারা দুর্গামায়ের রাতুল চরণে ভক্তদের নিয়ে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করবেন। পুষ্পাঞ্জলিতে করোনাকালে ভক্তদের পরিবারের পাশাপাশি দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল কামনা করা হবে। আগামী ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।