জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির (শান্তি চুক্তি) পর তিন জেলার উন্নয়ন ও প্রশাসনিক সুবিধার্ধে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রাণী ও মৎস্য-সহ গুরুত্বপূর্ণ ২৮টি বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তরিত হয় পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোতে। স্ব স্ব জেলার শিক্ষিত ও স্থায়ী বাসিন্দাদের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার কাজও করে জেলা পরিষদগুলো। ২০১৬ সালের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী শিক্ষক পদে। এরপর শিক্ষা, কৃষি, পরিবার পরিকল্পনা, মৎস্য অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ ও বাজার ফান্ড বিভাগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও আইনি জটিলতা, ক্ষমতাসীন দলের গ্রুপিং এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে স্থগিত হয়ে আছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়োগ প্রক্রিয়া। বিভিন্ন বিভাগে সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজার ৫০টি পদ খালি রেখেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সংস্থাগুলো। অন্যদিকে, চাকরি প্রার্থীদের দিন কাটছে বয়স সীমা শেষ হওয়ার শঙ্কা এবং বেকার জীবনের হতাশা নিয়ে।
মাটিরাঙা উপজেলার বেকার যুবক মেহেদী হাসান বলেন, ‘দেশের অন্যান্য জেলা হতে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয় তিন পার্বত্য জেলায়। এখানে পার্বত্য জেলা পরিষদ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। রাঙামাটি ও বান্দরবানে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও খাগড়াছড়িতে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ও মামলাসহ নানা কারণে নিয়োগ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে আছে চাকরি প্রার্থী বেকার যুবকেরা।’ দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু এবং নিয়োগ সম্পাদনের দাবি জানান মেহেদী।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সুদর্শন দত্ত বলেন, ‘জেলা পরিষদে নিয়োগে অনিয়মের কারণে মামলা, হাইকোর্টে রিট হওয়ার পাশাপাশি শীর্ষ নের্তৃবৃন্দের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, অনিয়মসহ নানা জটিলতায় নিয়োগ বন্ধ থাকায় হতাশ খাগড়াছড়ি জেলার বেকার যুবকেরা।’ সব আইনি জটিলতা নিরসন করে দ্রুত নিয়োগ সম্পাদনের জন্য জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নুরুল আফসার জানান, তার ডিপার্টমেন্টে ১৯ কর্মচারীসহ অর্ধশতাধিক পদ খালি আছে। এসব শূন্য পদে জনবল নিয়োগ না হওয়ায় দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। তিনিও দ্রুত জনবল নিয়োগের অনুরোধ জানান।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, ‘আইনি জটিলতাসহ নানা কারণে গত কয়েক বছর নিয়োগ বন্ধ আছে। সর্বশেষ করোনার কারণেও আটকে আছে কয়েকটি নিয়োগ। বিভিন্ন বিভাগে প্রায় হাজার খানেক পদ খালি থাকলেও সময়মতো নিয়োগ সম্পন্ন সম্ভব হচ্ছে না।’ তবে, এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে লিখেছেন এবং মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেলে নিয়োগ কার্যক্রম চালু করা হবে বলে জানান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।