গ্যাস-বিদ্যুৎ লাইন অপসারণ ছাড়াই সড়কে চলছে ফোরলেনের কাজ

ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের মহিপাল থেকে সেবারহাট পর্যন্ত চলছে ফোরলেন নির্মাণকাজ। এ সড়কের দুই পাশে রয়েছে ৯ শতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি আর গ্যাস সরবরাহ পাইপ। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ টাকা পরিশোধ করলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে খুঁটিগুলো অপসারণ না করেই বালু ভরাট করা হচ্ছে। অব্যাহত রয়েছে গ্যাস লাইনের ওপর রাস্তা নির্মাণকাজও। ফলে সড়কের কাজ শেষ হলেও পরে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ভোগান্তি পড়তে হবে পথচারীদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সড়ক বিভাগের আওতায় ৭৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মহিপাল থেকে নোয়াখালীর চৌমুহনী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারজুড়ে নির্মিত হচ্ছে ফোরলেন সড়ক। এরমধ্যে ফেনী অংশের ১৭ কিলোমিটারের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়। এর জন্য বরাদ্দ করা হয় ৩০৮ কোটি টাকা। নির্মাণকাজের দায়িত্ব পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং (এনডিই)।

সরেজমিন জানা গেছে, ফেনী অংশে সড়কের দুই পাশে বিদ্যুতের ৯১১টি খুঁটি রয়েছে। খুঁটি অপসারণের জন্য সাড়ে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বেশিরভাগ খুঁটিই অপসারণ না করে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ফেনী থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত রয়েছে গ্যাসের দুটি লাইন। এটিও অপসারণ না হওয়ায় কাজ করতে গিয়ে গ্যাস পাইপ উপড়ে যাওয়ায় ছোট-বড় লিকেজ হচ্ছে। আর বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে মেরামত করছে।

বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানায়, যেকোনও সময় অঘটন ঘটলে ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়া, দাগনভূঞার জায়লস্কর, মাতুভূঞা ও পৌর এলাকা, নোয়াখালীর বসুরহাট, সেনবাগ এলাকার গ্রাহকরা বড় ধরনের গ্যাসের বিপর্যয়ে পড়বেন। বাখরাবাদের ফেনী এরিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. সাহাবুদ্দীন জানান, গ্যাসলাইন অপসারণের জন্য বাখরাবাদের প্রধান কার্যালয়ের গঠিত টিম থেকে ৪৪ কোটি টাকা চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এর সুরাহা না করেই নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছে। এতে ভবিষ্যতের জন্যও ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। ঠিকাদারের লোকজন কোনও সমন্বয় না করে ইচ্ছেমতো কাজ করছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাকসুদুল আলম জানান, ফোরলেন প্রকল্পের সড়কের পাশে প্রয়োজন অনুযায়ী এক হাজার ৯২৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর জন্য জমির মালিকদের তিনগুণের বেশি ৫৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটিও পর্যায়ক্রমে সরানো হচ্ছে। গ্যাস লাইনের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং (এনডিই)-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মনজুরুল ইসলাম খুঁটি না সরানোয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করে বলেন, ‘তারা সময় মতো খুঁটি সরিয়ে নিলে কাজ আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে। এছাড়া গ্যাসের লাইন সড়কের নিচে থাকায় লাইন চিহ্নিত করে দেওয়ার জন্য বাখরাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ বারবার সহায়তা চেয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। মাটির নিচের গ্যাসের লাইন চিহ্নিত করতে না পারায় কাজ করতে গিয়ে কিছু জায়গায় গ্যাসের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা শিডিউল অনুযায়ী গুণগত মান ঠিক রেখে কাজটি দ্রুততার সঙ্গে করার চেষ্টা করছি। এতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা যথেষ্ট আন্তরিক। প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে মেয়াদের আগেই কাজটি সম্পন্ন হবে।’

ফেনী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমেদ জানান, ফোরলেন প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শেষ করতে সড়ক বিভাগ ছাড়াও বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ অন্য প্রতিষ্ঠানসমূহের সহযোগিতা প্রয়োজন। ফেনী সড়ক বিভাগ থেকে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। ফোরলেন প্রকল্পের ঠিকাদারকে উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া আছে।’